মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের জাতীয় শহিদ সেনা দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কড়া বার্তা দিলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। দেশবাসীর পাশাপাশি নাম না করে মহম্মদ ইউনুস এবং দেশের নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। না হয় পরে বলবেন যে আমি আপনাদের সতর্ক করিনি। আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে না পারেন তাহলে দেশ বিপন্ন হবে। যদি দু লাখ পুলিশ মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ না করলে একা সেনাবাহিনী কী করতে পারে?! পুলিশই বা কীভাবে কাজ করবে। তাদের তো মনোবল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কেউ জেলে, তো কারোর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। ‘
ইউনুস সরকার কয়েকশো পুলিশকে হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে বরখাস্ত করেছে। বহু পুলিশের বিরুদ্ধে সরকার মামলা করেছে। সেনাপ্রধান প্রকাশ্য সভায় এই সব পদক্ষেপের নিন্দা করেন। হাসিনা জমানায় গুমের অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে ইউনুস সরকার। গুম করা ব্যক্তিদের যে সব জায়গায় আটকে রাখা হত, তেমন কিছু জায়গার ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। ওই জায়গাগুলি বাস্তবে রয়েছে বলে পরিদর্শন করে দাবি করেন খোদ প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। এই প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, গুমের অভিযোগ তুলে যদি সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইকে কাঠগড়ায় তোলা হলে কী করে হবে ? বাহিনীর মনোবল ভেঙে গেলে কীভাবে চলবে?
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান যে পরিস্থিতির ব্যর্থতার দায় মহম্মদ ইউনুসের উপরেই চাপিয়েছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরও তার খুব একটা উন্নতি হয়নি। বরং পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা। রাজধানী ঢাকার মতো শহরে দিনেদুপুরে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিও বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলার বেহাল পরিস্থিতির জন্য সেনার দিকে আঙুল উঠেছে। তা নিয়েই এবার মুখ খুললেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, আমরা সুখে শান্তিতে থাকতে চাই, সে উদ্দেশে সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। সোমবার কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর ঘাঁটতে হামলা হয়৷ আরও কিছু জায়গায় একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় সেনা। ওয়াকার উজ জামান বলেন, সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করবেন না। আমাদের প্রতি, সেনাপ্রধানের প্রতি কারও কারও বিদ্বেষের কারণ নেই। আমাদের সাহায্য করেন, আক্রমণ নয়। প্রয়োজন হলে আমাদের পরামর্শ দিন। ওয়াকার উজজামান আরও বলেন, চলুন আমরা নিজেরা মারামারি না করে এক হয়ে থাকি। কোনও বিভেদ থাকলে আলোচনার মাধ্যমে তা ঠিক করে নেব। কেউ অপরাধ করলে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। দেশে একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা খারাপের সুযোগ নিচ্ছে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে অপরাধীরা। গত সাত মাসে শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশে অনেক মারামারি, কাটাকাটি হয়েছে। আর নয়।
পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই এগুলো দেশের জন্য অতীতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। দেশকে যে এত বছর স্থিতিশীল রাখা হয়েছে, এটার কারণ হচ্ছে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সিভিলিয়ানরা মিলে অর্গানাইজেশনগুলিকে এফেক্টিভ রেখেছে। আপনারা যদি মনে করেন, এসব অর্গানাইজেশনকে অসম্মান করে শান্তিতে থাকবেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক বিরাজ করবে, তা সম্ভব হবে না। এভাবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এবং যারা পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর উপর আক্রমণ করছে তাদেরকেও কড়া বার্তা দিলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। এর থেকে শিক্ষা নিয়ে কি শুধরোবে মহম্মদ ইউনুস ? ভারত বিরোধিতা ভুলে কি দেশের শান্তি ফেরাতে উদ্যোগী হবে ইউনুস সরকার ? সেনাপ্রধানের কড়া বার্তায় কি আদৌ শুধরোবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।