বুধবার বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে বানিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চে দাঁড়িয়ে এরাজ্যে একের পর এক বিনিয়োগের ঘোষণা করলেন তাবড় শিল্পপতিরা। সেই সঙ্গে রাজ্যে বানিজ্য অনুকুল পরিস্থিতি তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা শোনা গেল মুকেশ আম্বানি থেকে শুরু করে সজ্জন জিন্দাল, সঞ্জীব পুরি, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা প্রমুখ শিল্পপতিদের মুখে।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- এদিন কোন শিল্পপতি কত টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা করলেন তা এরকম। রিলায়েন্স কর্ণধার মুকেশ আম্বানি জানান ২০১৬ সালে যেখানে এরাজ্যে রিলায়েন্স এর মোট বিনিয়োগের পরিমান ছিলো মাত্র ২ হাজার কোটি টাকারও কম, সেখানে এই মুহূর্তে রাজ্যে মোট বিনিয়োগ ছাড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে রিলায়েন্স কর্ণধারের ঘোষণা “দিদি আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আগামি দশ বছরের মধ্যে এই বিনিয়োগ দ্বিগুন করা হবে যেখানে প্রায় এক লক্ষ কর্মসংস্থান হবে।” এছাড়া রিলায়েন্স রিটেইলস এরাজ্যে ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে জানিয়ে মুকেশ আম্বানি জানান, তাঁদের ‘স্বদেশ’ স্টোরের মাধ্যমে বাংলার তাঁত, কাঁথা স্টিচ, জামদানি শাড়ি বা বাংলার ফুড প্রোডাক্টস আজ দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছে গিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এর বার্তা দিয়ে আম্বানি জানান তাঁর জিও (Jio) সংস্থা কলকাতায় State of the Art AI Data centre তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি সোলার এনার্জি সেক্টরে বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা থেকে ‘সোনার বাংলা’ কে ‘সোলার বাংলা’ তৈরি করার কথাও জানান তিনি। মঞ্চ থেকেই মুকেশ আম্বানি বলেন, “যারা এখানে উপস্থিত রয়েছেন তাদের কাছে আমি আবেদন করছি এই রাজ্যের একজন অন্যতম বিনিয়োগকারী হিসাবে, এখানে বিনিয়োগ করুন।” মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে আম্বানি বলেন, “মমতা দিদি আপনাদের জন্য লাল কার্পেট বিছিয়ে অপেক্ষা করছেন।”
জেএসডব্লু কোম্পানির পক্ষে সজ্জন জিন্দাল বলেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই এখানে একটি সিমেন্ট কারখানা তৈরি করেছেন। এর পাশাপাশি পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীতে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে একটি 200 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে। এছাড়া ২০১১ জমির উপর একটি শিল্প তালুক তৈরির সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন বলে জানান সজ্জন জিন্দাল। তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর প্রসংশা করে জানান, “আমি বিশ্বাস করি মুখ্যমন্ত্রী মমতা দিদির হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গের একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পাওয়ার হাউজ হওয়ার সব রকমের সম্ভাবনা রয়েছে।”
অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের হর্ষবর্ধন নেওটিয়া উদ্বোধনী মঞ্চে বলেন, এ রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে পাঁচটা হাসপাতাল তাঁরা তৈরি করেছেন। পাশাপাশি দার্জিলিং, কালিম্পং, গরুমারা অভয়ারণ্য, দীঘা ও শান্তিনিকেতনে তাদের নতুন প্রজেক্ট তৈরি হচ্ছে যেখানে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে।” নতুন বিনিয়োগ হিসেবে হর্ষবর্ধন নেওটিয়া ঘোষণা করেন, “আগামী পাঁচ ছয় বছরের মধ্যে এ রাজ্যে আরও প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছেন তাঁরা।
আরপিজি সঞ্জীব গোয়েনকা গ্রুপের পক্ষে সঞ্জীব গোয়েনকা জানান, পশ্চিমবঙ্গে তাঁরা ইতিমধ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। আগামী দিনের বিনিয়োগের অংক হিসেবে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার ঘোষণা, “শিক্ষা স্বাস্থ্য ও এনার্জি সেক্টরে আরো প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করব।”