মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি। আমি কি ভুলিতে পারি।’ একুশে ফেব্রুয়ারি। এইদিনেই বাংলা ভাষার জন্য লড়াইয়ের বলি হয়েছিল তরতাজা বহু তরুণ। তাঁদের স্মরণে রেখেই প্রতি বছর উদযাপন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা দিবস নিজের ভাষাকে উদযাপনের দিন। নিজের ভাষা নিয়ে গৌরবান্বিত হওয়ার দিন। গৌরবের সঙ্গে দিনটি পালিত হয় দুই বাংলায়। হাতে হাত মিলিয়ে সীমান্তেও পালিত হয় দিনটি তবে ২০২৫-এর ছবিটা ছিল অন্য। কী এমন ঘটল এবারের ভাষাদিবসের উদযাপনে ?
প্রতিবছর ভাষা দিবসে শহিদদের প্রতি একসঙ্গে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কখনও অন্যথা হয়নি।
২০২৪-এও এদিনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি একসঙ্গে শহিদ মিনারে ভাষা আন্দোলনের শহিদদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছিলেন। প্রত্যাশামতোই মহম্মদ ইউনুস ও রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের একসঙ্গে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের কথা ছিল। কিন্তু তা দেখা গেল না। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সেখানে গেলেন না মহম্মদ ইউনুস। রাষ্ট্রপতি ফিরে যাওয়ার ঠিক ৭ মিনিটের মাথায় শহিদ মিনারে পৌঁছলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। কোনও উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করতেও দেখা যায়নি ভাষাদিবসের এই অনুষ্ঠানে। তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সংখ্যালঘুদের উপর নির্মম অত্যাচারের ঘটনায় উত্তাল বাংলাদেশ। সহ দেখেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনুস কেন মুখে কুলুপ এঁটেছেন এবং চোখে ঠুলি পড়ে রয়েছেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাবে কি তাঁর অঙ্গুলিহেলনেই বাংলাদেশ অশান্ত হচ্ছে ? সেই প্রশ্নও উঠেছে। এইসব সমালোচনার আবহেই এবার ভাষা দিবসে শহিদদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের নিয়মও ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন তিনি। হাসিনার সময়কালীন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন ছিলেন বলেই কি সেইসময় শহিদ মিনারে গেলেন না ইউনুস? প্রশ্ন উঠেছে।
প্রত্যেক বছর ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিতে পেট্রাপোল সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে ভাষা দিবস পালন করত। তবে হাসিনা সরকারের পতন এবং ইউনুস সরকারের আগমনের পর সেসব অতীত। ২০২৫-এ পেট্রাপোল বন্দরে যৌথভাবে ভাষা দিবস পালন হল না। ফলে অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা ভেবে গেলেও মন খারাপ করে সীমান্ত থেকে বাড়ি ফিরে গেলেন মানুষজন। উৎসব পালন হলেও দুই দেশ তা আলাদাভাবে উদযাপন করছে। দুই দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণেই কি ভাষাদিবসের যৌথ উদযাপন বন্ধ হল ?
২০০১ সাল থেকে সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে ভাষা দিবস পালন করত। দুই দেশের শিল্পীরা গান, বক্তৃতা এবং মিষ্টি বিনিময়ের মাধ্যমে উৎসবে অংশ নিতেন। দুই দেশের অসংখ্য সাধারণ মানুষও যোগ দিতেন। কিন্তু এবারের ছবিটা একেবারেই আলাদা। খানিকটা আশাহত হয়েই বাড়ি ফিরে যেতে হয় তাঁদের। ইউনুসের বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সেই পুরনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কি আবারও ফিরবে ? আবারও কি মাতৃভাষার উদযাপনে এক হতে পারবে দুই বাংলার মানুষ ? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।