মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আমেরিকা থেকে অবৈধভাবে বসবাসকারী ভারতীয়দের দফায় দফায় দেশে পাঠাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। সেই সময় বিমানে থাকা সকলের হাতেই হাতকড়া পরানো ছিল। পা শিকল দিয়ে বাঁধা ছিল। কেন ট্রাম্প সরকার তাঁদের হাতে পায়ে শিকল বেঁধে পাঠাল, প্রশ্ন উঠেছে। ৫ ফেব্রুয়ারির পর ১৫ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি আমেরিকায় অবৈধভাবে বসবাসকারী ভারতীয়দের নিয়ে আরও দু’টি বিমান আসে অমৃতসরে। প্রথম দফায় অবৈধবাসীদের হাতে পায়ে শিকল বাঁধা থাকলেও, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় সেই ছবি দেখা যায়নি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফায় অবৈধবাসী ভারতীয় মহিলা এবং শিশুদের শিকল বেঁধে পাঠায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই দাবিতে সিলমোহর দিল মোদী সরকার। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানালেন যে, শেষ দু-দফায় আমেরিকা থেকে বিতাড়িত ২২৮ জন অবৈধভাবে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে থাকা মহিলা এবং শিশুদেরকে শিকল বেঁধে বিমানে আনা হয়নি।
অবৈধবাসীদের শিকল বেঁধে ভারতে ফেরানোর ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছিল নেটমাধ্যমে। অভিযোগ ওঠে ট্রাম্পের পানামার একটি হোটেলে অবৈধবাসী ভারতীয়-সহ ৩০০ জনকে রাখা হয়েছে। ভারতীয়দের পাশাপাশি সেখানে ইরান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং চিনের অবৈধবাসীরাও রয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে এই তথ্য আদৌ সত্যি কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক দাবি করছে, পানামায় যাদের নির্বাসিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে ভারতীয় আছেন কি না, সেই তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। কোনও ভারতীয় থাকলে, তবে তাদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে। পানামার পাশাপাশি কোস্টারিকার অবৈধবাসীদের মধ্যে ভারতীয় আছে কিনা তা নিশ্চিতকরণের চেষ্টা চলছে।
৫ ফেব্রুয়ারি, ১০৪ জন অবৈধবাসীদের নিয়ে আমেরিকা থেকে অমৃতসরে আসে একটি বিমান
হাতকড়া ও পায়ে শিকল বেঁধে আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ
১৬ ফেব্রুয়ারি, ১১৯ জন অবৈধবাসী ভারতীয়কে নিয়ে অমৃতসরে আসে আমেরিকার দ্বিতীয় বিমান
১৭ ফেব্রুয়ারি আরও একটি বিমান আসে অবৈধবাসী ভারতীয়দের নিয়ে
শেষ দু’দফায় অবৈধবাসী ভারতীয় মহিলা এবং শিশুদের হাতে হাতকড়া এবং পায়ে শিকল বাঁধা হয়নি বলে দাবি করা হল ভারত সরকারের তরফে। অথচ অবৈধবাসী পুরুষদের ক্ষেত্রে হাজার আবেদন সত্বেও হাতে পায়ে শিকল বেঁধে আনা হল। এই নিয়ে মোদী সরকার কোনও মন্তব্য করেনি। এমনকি বাজেট অধিবেশনে এই ইস্যুতে শাসকদলকে বিঁধেছিল বিরোধীরা। প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। জবাবি ভাষণে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর শুধুমাত্র বলেন, “বিতাড়িত অবৈধবাসীদের সঙ্গে যাতে কোনও দুর্ব্যবহার না করা হয়, তা নিশ্চিত করতেই ভারত সরকার আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।’’ এস জয়শঙ্করের বিবৃতির পর আমেরিকা থেকে আরও দুদফায় অবৈধবাসীদের পাঠানো হল, যেখানে তাঁদের হাতে পায়ে আর শেকল ছিল না বলে দাবি করা হয়েছে। সবমিলিয়ে যখন ট্রাম্প মোদীর সম্পর্কের গভীরতা গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে, তখন ভারতীয় অবৈধবাসীদের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের এই ব্যবহারও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। যা একাধিক প্রশ্ন তুলে দিল।