নারী দিবস মানেই সামনে উঠে আসা সেই সমস্ত মেয়েদের কথা যাদের লড়াই উদ্বুদ্ধ করে আরো অনেক মেয়েকে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই আলোচনায় মনীষা পৈলানের নাম উঠে আসবে না এমন হতেই পারে না। মনীষা পৈলান এসিড যার মুখ ঝলসে দিয়েছে বদলে দিয়েছে জীবনের সংজ্ঞা তবু অপ্রতিরোধ্য হয়ে মনীষা আজও লড়ে যান।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিক: মুখ ঝলসেছে এসিডে, তবু সেই মুখ ওরনায় ঢাকার ভুল করেননি তিনি। সমাজের ফিসফাসকে উপেক্ষা করেছেন একার জোরেই। নারী দিবসে আরও একবার ফিরে দেখা এসিড আক্রান্ত মনীষা পৈলানকে
সাল ২০১৫, শীতের রাতে বাড়ি ফিরছিলেন মনীষা, বাড়ির প্রায় কাছেই অ্যাসিড হামলার শিকার হন সে-দিনের বছর ২০-এর মেয়েটি। শরীর জ্বলে যেতে শুরু করে মনীষার। সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু হয় তার ও পরিবারের যন্ত্রণার দীর্ঘ পর্ব। মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে তারই পুর্ব পরিচিত সেলিম হালদার। মনীষার দোষ কি ছিল জানেন? সেলিমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়া। আর তাই সেই দোষের শাস্তি হিসাবে মনীষার মুখকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। তবে
অ্যাসিড ক্ষত রুখতে পারেনি মনীষা পৈলানের জীবন যুদ্ধ। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মনীষা ছোট থেকে স্বপ্ন দেখতেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। কিছুটা খাম খেয়ালি স্বভাবের মনীষাই আজ অ্যাসিড আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে ভরসা।
গা শিউরে উঠছে? তাহলে মাত্র কয়েকটা মুহুর্তে ঠিক কতট যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল মনীষা এবং তার পরিবারের?
মেয়ে মনীষা, দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার ছিল জয়নগরের স্টেশনের আলু ব্যবসায়ী মুন্নাফ পৈলানের। এই ঘটনায় সেদিন যেন দিশাহারা হয়ে যায় পৈলান পরিবার। প্রথমে মেয়েকে স্থানীয় নার্সিংহোম, হাসপাতাল, পরে শহরের দুই মেডিক্যাল কলেজে দৌড়ন তার মা বাবা। আজ সেই লড়াইয়ের কথা মনে পড়লে দীর্ঘশ্বাস পড়ে মনীষার। কারণ ভুল চিকিৎসায় য়ার বাঁ চোখ প্রায় নষ্ট হয়েছে। একাধিক অস্ত্রোপচার হয়েছে তার মুখে। পরে টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ। কিন্তু বিচার? আজও হয়নি তবে সে আশায় এখনও ছেদ টানেননি মনীষা।
কার্যত মৃত্যুর সামনে থেকে ফিরে এসে নতুন চেহারায় তাকে দেখে মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। প্রথমবার নিজেকে আয়নায় দেখে ভয়ে কেদে ফেলেছিলেন নিজেও। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের অনেকেই সরে গেছেন জীবন থেকে। কিন্তু এত কিছুও মনীষার কাছে যা থেকে গেছে তা হল অদম্য জেদ যার কাছে হার স্বীকার করেছে সব কিছু। প্রথম প্রথম মুখ ঢাকলেও তারপর মনীষা উপলব্ধি করেন তাঁ
র মুখে এই অ্যাসিডের দাগ, এটা তো তার দোষে নয়। এটা সমাজের দোষ, সমাজের বিকৃত পুরুষতান্ত্রিক ইগো। সুতরাং লজ্জা পেলে তারা পাবে, মুখ ঢাকলে তারা ঢাকবে। এসিড তার চামড়া পুড়িছে মনের দৃরতা নয়।
লড়াকু মেয়েটি আজ অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত। মনীষা নিজেই বলেন অর্ধদগ্ধ মুখ তিনি ঢাকবেন না কোনওভাবেই৷ কারণ, তাঁর মুখটাই সমাজের আসল প্রতিফলন৷ মুখ তিনি ঢাকবেন না৷ মুখ ঢাকার মতো তিনি কিছু করেননি৷ কারণ, এই মুখই তার এগিয়ে চলার শক্তি, লড়াইয়ের কেন্দ্র
অ্যাসিড বদলে দিয়েছে তাঁ
র মুখ, লড়াইয়ের অভিমুখ। কিন্তু থামবার পাত্রী নন মনীষা পৈলান। দাঁতে দাঁত চেপে চলছে তার লড়াই। আপন ভাগ্য জয় করার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াই।
লড়াই চলুক মনীষা, আর একটা মেয়েকেও যাতে এই ভয়াবহ যন্ত্রণার শিকার না হতে হয় সেই কারণে আপনাকে তো লড়তেই হবে। নারী দিবসে আপনার এই অবদান সমাজের জন্য, মানে সেই সমাজের জন্য যে আপনাকে তকমা দিয়েছে পোড়ামুখী মেয়ে! আপনি ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন