যে সমস্ত ওষুধ রোজ ব্যবহার হয়, সেইসব ওষুধই যদি গুণমানে করে ডাহা ফেল!
তাহলে তো চিন্তা হবেই। কেন্দ্রীয় সংস্থার রিপোর্টে উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, সাংবাদিক: গুণমানের পরীক্ষায় ডাহা ফেল ৯৩টি ওষুধ। এই তালিকায় আছে প্যারাসিটামল থেকে প্রেশারের ওষুধ। একই সঙ্গে আবারও খারাপ গুণমান আরএল স্যালাইনে! শুধু তাই নয়, তালিকায় আছে শিশুদের ওষুধও!
আজকের যুগে অসুখ বাড়ছে প্রতিনিয়ত আর জ্বর জারি সর্দি-কাশি ব্লাড প্রেসার সুগার এখন বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে তাই প্যারাসিটামল থেকে শুরু করে বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক সাধারণ মানুষের নিত্য সঙ্গী আরে সেই নিত্যসঙ্গী রুপী ওষুধই কিনা গুণমানের পরীক্ষায় করল ডাহা ফেল! কেন্দ্রীয় সংস্থার এই রিপোর্টে রীতি মতো ছড়িয়েছে চঞ্চল্য।
রোজকার সঙ্গী এমন বহু ওষুধই অনুত্তীর্ণ হয়েছে কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের পরীক্ষায়। তালিকায় রয়েছে, প্যারাসিটামল থেকে শুরু করে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক, প্রেশারের ওষুধ থেকে থাইরয়েডে নিয়মমিত থাওয়ার ওষুধও।
এই রিপোর্ট ফের সামনে এনে দিয়েছে আরএল স্যালাইনকেও। কারণ
ওয়েস্ট বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালসের রিঙ্গার্স ল্যাকটেটের ১৬টি ব্যাচ যথাযথ গুণমানের নয় বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন। তাদের সম্প্রতি রিপোর্টেই ৯৩টি ওষুধেত গুণমান যথাযথ নয় বলে চিহ্নিত করা হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের ল্যাবে। এছাড়াও ৫২টি ওষুধকে নট অফ স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি চিহ্নিত করা হয়েছে কেন্দ্রের বিভিন্ন ল্যাবে। এর মধ্যে রয়েছে টেলমা এএম (ব্যাচ নম্বর ৫২৪০৩৬৭) ও অন্ডেম-৪ (ব্যাচ নম্বর ২৪৪৪১৪৫১)। বাজারে যে সমস্ত ওষুধ রয়েছে তাদের গুণগত মান যাচাই করার জন্য প্রতি মাসেই নমুনা সংগ্রহ করে এই পরীক্ষা করেন সিডিএসসিওর আধিকারিকরা। যে সমস্ত ব্যাচের ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করা হয়, তার গুণগত মান ঠিক রয়েছে কি না তা বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হয়। তাতেই এই তথ্য সামনে এসেছে। শুধুমাত্র এই ব্যাচের গুণমানের ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট প্রযোজ্য। এটা বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার অন্যান্য ব্যাচের ওষুধগুলির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই।
শুধু তো পরীক্ষায় পাশ করাই নয়, টেস্টের সময় ওষুধগুলোতে যা যা পাওয়া গেছে তা তো শিউরে ওঠার মতই। কিছু ওষুধ স্টেরিলিটি পরীক্ষায় ফেল করেছে। কোনও নমুনাতে আবার মিলেছে ব্যাকটেরিয়া! এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য এই রাজ্যে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবের পরীক্ষায় ফেল করেছে, দুটি বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার দুটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ওষুধ। একটি হল, টেলমিসারটান, যা হার্টের রোগীদের দেওয়া হয়। আরেকটি হল, অ্যামোক্সিসিলিন ও পটাশিয়াম ক্ল্যাভিউনেট।
একবার দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন ওষুধ এই পরীক্ষায় পাশ করতে পারল না! তালিকায় যেমন আছে প্যারাসিটামল, তেমনই আছে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক। বাদ যায়নি প্রেশারের ওষুধও। আছে থাইরয়েডে নিয়মমিত থাওয়ার ওষুধও। নিউমোনিয়ার মতো কঠিন অসুখের ওষুধও ফেল-করা ওষুধের দলে। নার্ভ থেকে হার্ট তালিকায় বাদ নেই কেউ। এমনকি, শিশুদের জন্য ব্যবহৃত সর্দি কাশির সিরাপ, হৃদরোগে আক্রান্তদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ওষুধ , ত্বকের ফাংগাল ইনফেকশনের ক্রিম, ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণের ওষুধ , লিভার ও খাদ্যনালীতে হওয়া আলসার উপশমের ওষুধ।
সম্প্রতি রিংগার ল্যাকটেট স্যালাইন প্রয়োগের ফলে প্রসূতি মৃত্যুর ভয়ংকর অভিযোগ সামনে এসেছিল মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ থেকে। তারপরই সামনে এসেছিল পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের নাম। এবার আরো একবার সেই সংস্থার ই ১৬ টি ব্যাচের রিংগার ল্যাকটেটকে খারাপ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে মানুষ এবার কি তাহলে ওষুধ খাওয়াই ছেড়ে দেবে!