মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ও ‘গণপরিষদ নির্বাচন’ বিতর্ক। ছাত্র-তরুণদের দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ অর্থাৎ এনসিপি নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি তুলেছে। কিন্তু বিষয়টিকে যথেষ্ট সন্দেহের নজরেই দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
২৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টি। তাদের দাবি, গণপরিষদ নির্বাচন ছাড়া দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তারা চাইছে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা, যেখানে নতুন সংবিধান হবে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধের মূল হাতিয়ার।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে নতুন সংবিধান, নতুন প্রজাতন্ত্র দরকার। তার জন্য নতুন সংবিধান এবং গণপরিষদ নির্বাচনের প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়া গণতন্ত্রের অর্থ নেই। গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনও একসঙ্গে হতে পারে।
তবে বিএনপি এনসিপির এজেন্ডা নিয়ে সন্দিহান। তাদের মতে, এটি একটি রাজনৈতিক চাল, যার মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘নতুন দল এসেছে, আপনারা সাবধান থাকবেন। আমি কিন্তু তাদের স্লোগান বুঝি না। আমি কিন্তু বুঝিনি কাকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে। আমি এখনো বুঝিনি সেকেন্ড রিপাবলিক কী। কী বোঝায়, আপনার বুঝেছেন কি না, জানি না। অর্থাৎ একটা অসিলা ধরে জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে।’
বিএনপির নেতারা আরও বলছেন, সংবিধান সংস্কারে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি কেন, সেটি তাঁদের কাছে বোধগম্য নয়। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, সরকার সংবিধান সংস্কার কমিশন করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো এই কমিশনে তাদের পৃথক সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এখন সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে কোন কোন জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলো একমত, কোথায় কোথায় ভিন্নমত, সে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা হবে। তাহলে নতুন সংবিধানের কথা বলে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রশ্ন আসছে কেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যার একটি সংবিধান আছে। সেই সংবিধানে শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। যার প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সরকারের বয়স ছয় মাস পার হয়েছে। তাহলে এত দিন পর গণপরিষদের প্রয়োজন দেখা দিল কেন।
সবমিলিয়ে প্রাথমিকভাবে বিএনপিকে এই জাতীয় নাগরিক পার্টির পাশেই পাওয়া গিয়েছিল। এইসব বিতর্ক কি গাঁটছড়া শিথিলের ইঙ্গিত ?
বাংলাদেশ কি নতুন সংবিধানের পথে এগোচ্ছে ? নাকি এটা শুধুই রাজনৈতিক বিতর্ক? প্রশ্ন অনেক তবে উত্তর পাওয়াটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।