মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃপ্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে দিনের পর দিন রেকর্ড ভাঙছে ভারত। মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের আওতায়, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রায় ৬৫ শতাংশই তৈরি হচ্ছে দেশে।
সাফল্যের চূড়ায় মেক ইন ইন্ডিয়া। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির হার রেকর্ড গড়ছে। ইতিমধ্যে এই সংক্রান্ত একটি তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে। যাতে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষাখাতে শক্তি জোগাচ্ছে মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগ। ৬৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এখন দেশের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে। যা এককথায় অভিনব। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা খাতে মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের ফলে ১ লক্ষ ২৭ হাজার কোটি টাকার সরঞ্জাম তৈরি হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা খাতে দেশীয় নির্মাণ হয়েছিল মাত্র ৪৬ হাজার ৪২৯ কোটি টাকার। অর্থাৎ মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের ফলে ১০ বছরে ১৭৪ শতাংশ নির্মাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুদ্ধ বিমান থেকে শুরু করে যুদ্ধজাহাজ, কামান সহ বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এখন তৈরি হচ্ছে দেশের মধ্যে। উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে প্রতিরক্ষায় পথ দেখাতে শুরু করেছে ভারত। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের উৎপাদনের হার এতটাই ভালো হচ্ছে যে এবার শতাধিক দেশে সরঞ্জাম আমদানি করছে ভারত। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ২১হাজার ৮৩ কোটি টাকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন করেছে ভারত। গত ১০ বছরে ৩০গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এই উৎপাদন।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক কোন কোন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সবচেয়ে বেশি রফতানি করেছে ভারত- ১. বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, ২. ডনিয়ার এয়ারক্র্যাফ্ট, ৩. চেতক হেলিকপ্টার, ৪. ফাস্ট ইন্টারসেপ্টর বোট, ৫. লাইটওয়েট টর্পিডোস
এবার প্রশ্ন হল কারা কিনছে এইসব সরঞ্জাম ? ক্রেতাদের তালিকায় সবচেয়ে শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা, ফ্রান্স, আর্মেনিয়া। রাশিয়াও ভারতের তৈরি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় করেছে। রুশ সেনা যে বুট ব্যবহার করে, তাও মেড ইন বিহার। এর থেকে এটা স্পষ্ট যে, ভারতীয় নির্মাণ সামগ্রী প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে অনেকটাই উন্নতি করেছে। প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে ভারতের যে দুটি প্রধান লক্ষ্য, তা হল – প্রথমত নিজেদের প্রতিরক্ষার চাহিদা পূরণ করতে হবে। এরপরই বিশ্ব অস্ত্র বাজারে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে ভারত। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য ক্রমাগত প্রতিরক্ষাখাতে উন্নয়নের কাজ চলেছে। গত কয়েকমাসে ভারতের ফাইটার জেট প্রোগ্রামগুলি ব্যাপকভাবে নজর কেড়েছে। তবে আপাতত ভারতীয় বায়ুসেনা তেজস যুদ্ধবিমানের জন্য অপেক্ষা করছে। পরে পুরনো রুশ মিগ যুদ্ধবিমানগুলির জায়গা নিতে চলেছে এই তেজস। এখনও তেজস হাতে পায়নি ভারত। এই ইস্যুতে ইতিমধ্যে হিন্দুস্তান এরোনটিক্যাল লিমিটেড বা হ্যালের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের ফার্স্ট এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং। হ্যালে তৈরি হচ্ছে তেজস। অতীতে সরকারি সংস্থা হিসেবে পরিচিত হ্যালের ৫০ শতাংশের অংশীদারিত্ব বেসরকারি হাতে। তেজসের ওই ইঞ্জিন নির্মাতা সংস্থা জেনারেল ইলেকট্রিকস বা জিই অ্যারোস্পেস প্রথম ইঞ্জিন পাঠিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে তেজস নির্মাণকারী রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা ‘হ্যাল’। চলতি বছরেই জিই অ্যারোস্পেস ১২টি ইঞ্জিন সরবরাহ করবে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে। তেজসের ডেলিভারির নির্ধারিত সময়ের পর ২ বছর পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও ভারতের হাতে এল না তেজস। সেই লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ করছে হ্যাল। যত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করা যায়, সেই চেষ্টাই চালাচ্ছে তারা। চলতি বছরে ১২টি ইঞ্জিন ডেলিভারি ভারতকে দিয়ে দেবে । পরবর্তী বছর থেকে প্রতি বছরে ২০টি করে ইঞ্জিন হাতে পাবে ভারত, সেই লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তা হলে হ্যাল আরও তাড়াতাড়ি তেজসের নির্মাণ বাড়াতে পারবে। দেশের ভিতরে তেজস তৈরি হওয়ার কারণে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রোগ্রাম আরও জোর পেয়েছে। পরবর্তীকালে তা আরও বাড়বে বলাই বাহুল্য
এইসবের কারণেই তো এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে ভারতের প্রতিরক্ষা নির্মাণ। এক দশক আগেও এমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। সেসময় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ অস্ত্রই আমদানি করা হত বিদেশ থেকে। এই সাফল্য এসেছে সরকারি নীতি, স্বদেশী প্রযুক্তি উন্নয়ন, এবং পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। উৎপাদন মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.২৭ লক্ষ কোটিতে। প্রতিরক্ষা সামগ্রী রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১,০৮৩ কোটি টাকায়। ২০২৮-২৯ নাগাদ প্রতিরক্ষা খাতে উৎপাদন ৩ লক্ষ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।