ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক: ২০১০ সালের ঘটনা। আর পাঁচটা দিনের মতোই বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্কুলে আসেন শিক্ষিকা মধুরিমা দাস। দক্ষিন ২৪ পরগনার মহেশপুর প্রফুল্ল বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষিকা তিনি। শিক্ষিকার সালোয়ার কামিজ পড়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। ইংরেজি শিক্ষিকার আবেদন ছিল, যেহেতু তাঁকে বাঁশদ্রোনি থেকে বাসন্তী প্রতিদিন বাসে, ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়, তাই প্রতিদিন স্কুলে শাড়ি পরে আসা সম্ভব নয়। এই সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও সুরাহা হয়নি।
২০১০সালের ডিসেম্বর মাসে ছাত্রীদের সামনে তাঁদের অভিভাবকদের একাংশের উপস্থিতি ও বেশ কিছু শিক্ষিকা তাঁকে চুড়ান্ত হেনস্থা করেন। শিক্ষিকাকে মারধর ও মাথার চুল কেটে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তিনি অসুস্থ্য হয়ে পরায় তাঁকে বাসন্তী থানার পুলিস উদ্ধার করেন।
তার পর থেকেই ওই শিক্ষিকা মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন। স্কুলে তাঁকে আর ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। স্কুল কর্তৃপক্ষ তার বেতন বন্ধ করে দেয়। এবং শিক্ষিকার খোঁজও নেয়নি স্কুল। প্রায় ৭ বছর মানসিক চিকিতসাধীন থাকার পর ফিট সার্টিফিকেট পান। পুর বিষয়টি শিক্ষা দফতরকে জানিয়েও কোন সুরাহা হয়নি। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
পাঁচ বছর কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন এজ্লাস ঘুরে মামলা আসে বিচারপতি রায় চট্টোপাধ্যায়রে এজলাসে। শুক্রবার মামলা চলাকালীন শিক্ষিকার পক্ষের আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী জানান, কোন শিক্ষিকা কি ধরনের পোশাক পড়বেন তা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ফতোয়া জারি করতে পারেনা। সালোয়ার কামিজ কোনরকম অশ্লীনতা নেই। সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন নির্দেশে বলা আছে পোশাকের মধ্যে শালীনতা থাকলে সেই পোশাক পড়তে পারবেন। ওই শিক্ষিকাকে স্কুল চত্তরের মধ্যেই হেনস্থা করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কারোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং হেনস্থা করতে উৎসাহিত করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিন মানসিক অসুস্থতা থাকার পর কুল তার খোঁজ নেয়নি। তার বিরুদ্ধে কোন ডিসিপ্লিনারি পদক্ষেপণ নেয়নি। তিনি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও স্কুলে ওই শিক্ষিকাকে আর ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
বিচারপতি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবার প্রয়োজন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুল পরিদর্শক কে নির্দেশ দেন সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার পর পুনরায় ওই শিক্ষিকাকে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।