ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক: বর্তমান যুগে খুব কম লোকই আছে যাদের মোবাইল নেই বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। আজকাল, মোবাইল প্রত্যেকের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিচ্ছেদ্দ অংশ হয়ে উঠেছে। মার্টিন কুপার ১৯৭৩ সালে মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেছিলেন। আর ভারতে ১৯৯৫ সালের ৩১ জুলাই প্রথমবার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কল করা হয়েছিল৷ অনেকেই হয়ত জানেননা, তৎকালীন টেলিকম মন্ত্রী সুখ রাম প্রথমবার মোবাইলে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুখ রাম জানিয়েছিলেন, তিঁনি জাপান সফরে গিয়ে মোবাইল ফোন দেখেছিলেন। তাঁর আতিথেয়তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকের পকেটে ছিল মোবাইল। সেইসময়ই তিনি ঠিক করেন, এমন পরিষেবা ভারতেও দরকার। এরপরেই প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধিও বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন মিলতেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুখ রাম তাঁর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন রিলায়েন্স গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ধীরুভাই অম্বানীকে। কিংবদন্তি ব্যবসায়ী এই বিষয়ে বলেন, ভবিষ্যতে মোবাইল ফোন ব্যবসা ভারতে খুবই জনপ্রিয় হবে৷ সরকারি নথি অনুসারে জ্যোতি বসু এবং সুখ রামের কথপকথন ছিল দেশের প্রথম মোবাইল ফোন কল৷ তথ্য বলে, সেই সময় নোকিয়ার রিংগো মডেলের সেট ব্যবহার করে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন জ্যোতি বসু এবং সুখ রাম। জানা যায়, ভারতের বি কে মোদি গোষ্ঠি এবং অস্ট্রেলিয়া টেলস্ট্রা সংস্থার যৌথ প্রয়াসের ফল এই ইতিহাস তৈরী হয়েছিল। তৎকালীন সংস্থা মোদি টেলস্ট্রা-র নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এই ফোন কলটি করা হয়েছিল বলে জানা যায়। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লির সঞ্চার ভবন থেকে কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী সুখ রাম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছিলেন কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে থাকা জ্যোতি বসুর সাথে। এই ঘটনার পরেই কলকাতায় চালু হয় মোবাইল পরিষেবা। উদ্যোগটি নিয়েছিল তৎকালীন সংস্থা মোদি টেলস্ট্রা৷
আজ দেশের সর্ববৃহৎ টেলিকম অপারেটর সংস্থা রিলায়েন্স জিও-র মালিকানা সেই অম্বানী পরিবারের হাতেই রয়েছে৷ ৯৫ এর কোঠায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুখ রাম বাবু জানিয়েছেন, ভারতে মোবাইল ফোন পরিষেবা শুরু করার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন বটে, তবে তিনি এটা ভাবতে পারেননি যে, মোবাইলে কোনদিন ক্যামেরাও চলে আসবে। যদিও ১৯৯০-এর দশকে শুরুর দিকে অনেক বিরোধীতারও সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে। তবে আজ মোবাইল যেভাবে গ্রাহকদের হাতের নাগালে চলে এসেছে তা দেখে খুশি প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী।