বুধবার রাজ্য বিধানসভায় শুভেন্দু অধিকারীর এক মন্তব্য নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ সরাসরি তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করলেন। তিনি অভিযোগ করেন, “আপনারা বাইরে ধর্মান্তকরণের কথা বলবেন, আর ভেতরে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা শোনাবেন। এটা আর চলবে না!”
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুসলিম বিধায়কদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে বুধবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য বিধানসভা। এদিন বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব আনেন রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানী। সেই আলোচনাতেই বক্তব্য রাখেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখার সময় বিরোধীরা যখন হইচই করছেন তখন নিজের বক্তব্য থামিয়ে বিরোধীদের বলার সুযোগ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই সময়েই সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ।
বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে উঠে শংকর ঘোষ বলেন, “আপনি আচরি ধর্ম, পরেরে শেখাও।” স্বামী বিবেকানন্দের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “সত্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা যায়, কিন্তু সত্যকে ত্যাগ করা যায় না।” তিনি অভিযোগ তোলেন, ফিরহাদ হাকিম, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বা হুমায়ুন কবীররা বারবার ধর্মীয় বিভাজনের কথা বলেছেন, অথচ সরকার চুপ থেকেছে। বালুরঘাটের মহিলার দণ্ডী নিয়ে তিনি সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে তৃণমূলের এক মন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে নাচতে গিয়ে হাতে গ্লাভস পরেন! অথচ তিনি সব ধর্মের প্রতিনিধিত্বের দাবি করেন।” এখানেই শেষ নয়, বিরোধী দলনেতার অনুপস্থিতিতে (সাসপেন্ড হওয়ার কারণে) এই আলোচনা নিয়ে শাসক দল এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ শানান বিজেপির মুখ্য সচেতক। তিনি বলেন, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সাসপেন্ড থাকায় তিনি বিধানসভায় উপস্থিত নেই। কিন্তু তাও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের জবাব দিতে এসেছেন বলে কটাক্ষ করেন শংকর ঘোষ। তিনি বলেন, “বিরোধী দলনেতা যখন বাইরে, তখন তাঁর কথার জবাব দিতে এসেছেন। আগে নিজের দলের মন্ত্রী-বিধায়কদের সামলান!”
এদিন সরাসরি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলে তিনি বলেন, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে আপনি যা বলছেন তা দু ধরনের মানসিকতার ইঙ্গিত। তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন, “আপনি বলেছেন সত্যের জন্য কোনো কিছু ত্যাগ করা যায় না। তাহলে আপনি স্বীকার করবেন কি, বিধানসভার সদস্য না হয়েও আপনি বিধানসভা ভাঙার কাজে যুক্ত ছিলেন?” এই সময় অধ্যক্ষ জানান শংকর ঘোষের এই বক্তব্য কার্য বিবরণী তে যাবে না। এরপর তিনি আরও আক্রমণাত্মক হয়ে বলেন, “আপনার দলের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেছেন, ‘আমরা ৭০, আপনারা(হিন্দু) ৩০। আপনাদের কেটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেব।’ তখন আপনি কী করেছিলেন?” তিনি আরও বলেন, “আপনার মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ধর্মান্তকরণের কথা বলেছিলেন। তখন আপনি চেয়ারের মর্যাদা রেখেছিলেন? আপনি যদি চেয়ারের সম্মান না রাখেন, তাহলে আমরাও রাখতে বাধ্য নই!” শংকর ঘোষের এই মন্তব্যের পরই ফের একবার বিধানসভায় শোরগোল শুরু হয়ে যায়। বিজেপি বিধায়কদের পাশাপাশি হই হট্টগোল শুরু করে দেন শাসক দলের বিধায়করাও।বিক্ষোভের জেরে অধিবেশন কিছু সময়ের জন্য ব্যাহত হয়। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের একদম শেষ দিকে অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াক আউট করেন বিজেপি বিধায়করা।