পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় তুমুল উত্তেজনার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ বার্তা দিলেন—দেশকে ভাগ করার চেষ্টা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। বিজেপির সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মাঝে তিনি বলেন, “দেশ সৌজন্যের দেশ। মানুষের জীবনে মানবিকতাই সবচেয়ে বড়।”
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধি- বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যখন আমরা কোনো চেয়ারে বসি, তখন we care for all.” কিন্তু এই মন্তব্যের পরপরই বিজেপি বিধায়করা হট্টগোল শুরু করেন। তাদের অভিযোগ, রাজ্যে হিন্দুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপের পরও বিজেপির তরফে স্লোগান চলতেই থাকে।
বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই অভিযোগ করেন, “আপনি বলেছিলেন সত্যের জন্য কিছু ত্যাগ করা যায় না। তাহলে আপনি স্বীকার করবেন কি, বিধানসভার সদস্য না হয়েও আপনি বিধানসভা ভাঙার কাজে যুক্ত ছিলেন?” একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, “আপনার দলের এক বিধায়ক বলেছিলেন, আমরা ৭০, আপনারা ৩০। আপনাদের কেটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেব। তখন আপনি কী করেছিলেন?”
মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা তোপ
বিজেপির এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ফিরহাদ হাকিমকে আমি নিজে বলেছি, এই ধরনের কথা বলা যাবে না। মদন মিত্র বা হুমায়ূন কবীরের বক্তব্যের ক্ষেত্রেও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।” তিনি দাবি করেন, তৃণমূল একটি ডিসিপ্লিনড দল এবং বিজেপির অভিযোগের ৯০ শতাংশই মিথ্যে।
এরপরই বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, “আপনাদের এই ধর্ম মানে শুধু মানুষকে খুন করা, কেটে ফেলা, টুকরো টুকরো করা।” পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিদেশ সফর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন সৌদি আরবে যান, তখন তো ইরাক বা ইরানে যান না।”
ধর্মীয় রাজনীতিতে আক্রমণ
মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির ধর্মীয় রাজনীতির কৌশলকে সরাসরি আক্রমণ করে বলেন, “আপনারা মুসলিমদের কেন টিকিট দেন না? আমি তো হিন্দুদের ৭৯ শতাংশ টিকিট দিই, তখন তো আপনারা কিছু বলেন না!”
বাংলার ভূগোল ও সীমান্ত প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “বাংলা বাংলাদেশের বর্ডার। সেনসিটিভ ইস্যু।” এরপরই বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “এক মনিপুর চালাতে পারছেন না, হিমসিম খাচ্ছেন। আর আপনারা চালাবেন বাংলা?”
শুভেন্দুকে কড়া বার্তা
বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায় সম্পর্কে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমি সেটাকে ধিক্কার জানাই।” শুভেন্দু অধিকারীর নাম না নিয়ে তিনি বলেন, “যিনি এই কথা বলেছেন, তিনি একদিন পস্তাবেন। তিনি তিনবার দল বদলেছেন।”
শুভেন্দুর সাম্প্রতিক মন্তব্যকে কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তুমি এখন শুধু জামাটা বলেছো। এই জামাটা আবার যেন না লাল জামায় পরিণত হয়!”
কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ
মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের স্থিতিশীলতার দাবিকেও তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, “দুটো দল নিয়ে সরকার চালিয়ে দেখাচ্ছেন যে স্টেবল, কিন্তু আসলে সম্পূর্ণ আনস্টেবল।” বিজেপির রাজনৈতিক চক্রান্ত নিয়ে তিনি বলেন, “এরা শুধু ভুল এজেন্সি দিয়ে কাজ করে। এক বড়বাবু আরেক বড়বাবুর কাছে গিয়ে বলে কাকে ইডি ধরবে, কাকে সিবিআই ধরবে।”
শেষবার্তা: দেশকে ভাগ হতে দেব না
মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষে বলেন, “এই হাউস সকলের। বাংলা একদিন ভারতের রাজধানী ছিল। এই ভারতকে তাচ্ছিল্য করবেন না। দেশকে টুকরো করার চেষ্টা করবেন না। এটা আমরা মানবো না!”
এভাবেই বিধানসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, বাংলার রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণের কোনো জায়গা নেই।