মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ নদীর এপাড় কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস। নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে; কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতায় সুখকে এমনভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে। কী করলে মিলবে সুখের ভান্ডার, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। গরিব ভাবে অর্থ পেলেই মিলবে সুখ, আবার ধনীরা আর্থিকভাবে সমস্ত কিছু পেয়ে গেলেও খুঁজে পায় না সুখ। অন্তত ভারতীয়দের মন থেকে ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে সুখ। আর সেজন্যই তো সুখী দেশের নিরিখে পাকিস্তান-প্যালেস্টাইনের থেকেও পিছিয়ে গেল ভারত।
বিশ্ব সুখ প্রতিবেদন ২০২৫-এ ভারতের র্যারঙ্কিং উন্নত হলেও, পাকিস্তান এবং ইরানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়েও পিছিয়ে গেল ভারত। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েলবিইং রিসার্চ সেন্টার, গ্যালাপ এবং রাষ্ট্রসংঘের টেকসই উন্নয়ন সমাধান নেটওয়ার্কের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ১৪৭টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১১৮ নম্বরে।ভারতের চেয়ে ভালো অবস্থানে ৯২ নম্বরে আছে নেপাল। ও ১০৯ নম্বরে রয়েছে পাকিস্তান । দক্ষিণ এশিয়ার আরও দুই দেশ মায়ানমারের অবস্থান ১২৬তম এবং শ্রীলঙ্কা রয়েছে ১৩৩ নম্বরে।
প্রতিবেদনে গত বছরের তুলনায় পাঁচ ধাপ পিছিয়ে এ বছর ১৩৪তম অবস্থানে নেমে গেছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী এবছরও সুখী দেশের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে ফিনল্যান্ড। এই নিয়ে টানা অষ্টমবার ফিনল্যান্ড সুখী দেশের তালিকায় এক নম্বর স্থান দখল করেছে। ফিনল্যান্ডের পরই আছে ডেনমার্ক। এরপর আইসল্যান্ড ও সুইডেন।
২০ মার্চ ছিল ‘আন্তর্জাতিক সুখ দিবস’ বা ‘বিশ্ব সুখী দিবস’। ২০১২ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০ মার্চকে আন্তর্জাতিক সুখ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর রাষ্ট্রসংঘ ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে। তাতেই প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়েও পিছিয়ে গেল ভারতের অবস্থান। এবছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কেবল আফগানিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের পেছনে। তালিকায় থাকা ১৪৭টি দেশের মধ্যে সবার শেষে রয়েছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশ ২০২৪ সালে তালিকায় ১২৯তম, ২০২৩ সালে ১১৮তম এবং ২০২২ সালে ৯৪তম অবস্থানে ছিল। টানা চার বছর সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের শুধু অবনতি হয়েছে।
সমীক্ষায় প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে তাদের সার্বিক জীবন নিয়ে সন্তুষ্টির ওপর নম্বর দিতে বলা হয় এবং জীবন নিয়ে ওই পর্যালোচনার ভিত্তিতে তৈরি তালিকায় দেশগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। জীবন নিয়ে পর্যালোচনার জন্য ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিবেচনা করা হয়। সূচকগুলো হলো-মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি, সামাজিক সহায়তা, সুস্থ জীবনযাপনের প্রত্যাশা, স্বাধীনতা, উদারতা ও দুর্নীতি নিয়ে মনোভাব। গ্যালাপের পরিচালক ইলানা রনলেভি বলেন, ‘ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলোয় সবার জন্য উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সামাজিক সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে। ভালো থাকার ক্ষেত্রেও বৈষম্য অনেক কম।’ সেজন্যই তো সুখী দেশের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ফিনল্যান্ড। প্রথম দশে ৫ নম্বরে রয়েছে নেদারল্যান্ডস, ৮ নম্বরে রয়েছে ইজরায়েল এবং ৯ নম্বরে রয়েছে লুক্সেমবার্গ। তালিকায় এ বছরই খারাপ অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি এবার রয়েছে তালিকায় ২৪ নম্বরে। এ বছর তালিকার শেষের দিক থেকে আফগানিস্তানের ওপরে রয়েছে সিয়েরা লিওন, লেবানন, মালাবি, জিম্বাবোয়ে।