জলের অপর নাম জীবন। জলজপ্রানীদের ক্ষেত্রে জলে জীবন কাটানো সহজ। তবে মানুষের ক্ষেত্রে জলকেই বাসস্থান করে বেছে নেওয়াটা নিছক সহজ নয়। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন গৌতম। কিভাবে এটি সম্ভব হল। জানতে পুরো প্রতিবেদনটি পড়ুন।
নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক: কংক্রিটের মোহ ছেড়ে জলে বাস। তবে এরা কোনও জলজপ্রাণী নয়। জলের মধ্যে স্বপরিবার বাসস্থান গড়েছেন গৌতম। ইট -সিমেন্ট, চারদেওয়াল, মাথার উপর ছাদ সমস্ত বিলাসিতার মোহ ত্যাগ করে সমুদ্রেই আড়াই বছর ধরে সংসার পেতেছেন গৌতমবাবু। তবে ডাঙার জীবন ছেড়ে জলের টানে জলের মধ্যে জীবন কাটানোটা খুব একটা সহজ ছিল না তাঁর কাছে। কিন্তু এই অসাধ্যকেই বাস্তবতার রূপ দিওয়েছেন তিনি।
গৌতমের পুরো নাম গৌরব গৌতম। তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাক্তন ক্যাপ্টেন। তাঁর স্ত্রী বৈদেহী এবং তাঁদের কন্যা কেয়াকে নিয়ে ২০২২ সাল থেকে বাস করছেন জলে। জলে ভাসমান সংসারে গৌতমবাবুকে সবসময় সাহায্য করে চলেছেন তাঁর স্ত্রী বৈদেহী। বর্তমানে যে জাহাজ তাঁদের এখন ঠিকানা সেটি ৪২ ফুট লম্বা। জাহাজটির নাম দেওয়া হয়েছে রিভা। আর এই ভাসমান বাড়ী রিভাতেই গত আড়াই বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন গৌতম। গৌতম সোশ্যাল মিডিয়াতে “দ্য রিভা প্রজেক্ট’-এ তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অংশের ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে গৌরব গৌতম, তার স্ত্রী বৈদেহী ও কন্যা কেয়া আনন্দের সঙ্গে সমুদ্রে বসবাস, সেখানকার সীমাবদ্ধতা সবকিছুই সেয়ার করছেন তাঁরা। পাশাপাশি একটি পোস্টে তাঁরা লিখেছেন,‘‘একটি নৌকায় সংসার ও জীবনযাপন করার জন্য আমরা চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমরা প্রায় সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছি।’’ স্থলভাগ ছেড়ে সমুদ্রে জীবনযাপন করার ক্ষেত্রে তাঁদেরকে ত্যাগ করতে হয়েছে অনেককিছু। দৈনন্দিন জীবনের এমন অনেক জিনিস তাঁদের ত্যাগ করতে হয়েছে যেগুলির সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে ছিল। বৈদেহী-র পোষ্টের একটি লেখায় তাঁর আবেগের কথা স্পষ্ট প্রকাশিত হয়। যেমন বৈদেহী উত্তরাধিকার সূত্রে বেশ কিছু বাসনপত্র পেয়েছিলেন যেগুলো চেকোস্লোভাকিয়ায় তৈরি । যেগুলি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁদের সংসারের অংশ ছিল। কিন্তু বৈদেহী জানতেন যে, এটি তাঁদের নতুন ভাসমান বাড়িতে টিকবে না। তাই মনের দুঃখ চেপে সেগুলো তাঁদের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে উপহার দিয়ে দেন। এরকম প্রচুর জিনিস তাঁদের দিয়ে দিতে হয়েছে যার সঙ্গে আবেগ জড়িত ছিল। জানা গেছে এই দম্পতি তাঁদের প্রায় সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিলেন, তাঁদের জিনিসপত্র ৬ হাজার কেজি থেকে কমিয়ে মাত্র ১২০ কেজি করেছিলেন। গৌরব তাঁর একটি পোস্টে লেখেন,‘‘নৌকায় আমরা যে জিনিসপত্র রাখতে পারতাম না সেগুলি আর প্রাণে ধরে রাখার কোনও অর্থ ছিল না।’’ রেভা জাহাজটি কেনার পর বেশ কিছুদিন তাঁদের সময় লেগেছিল জলে বসবাস করার আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করতে। তবে এখন গৌরব দম্পতি ও তাঁদের মেয়েকে নিয়ে জলের মধ্যে খুব সুন্দর জীবন কাটাচ্ছেন। জলে জীবন কাটানোর আত্মবিশ্বাস তাঁদের পোস্ট করা ছবিতে স্পষ্ট।