মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং ঘিবলি জিবলি ইমেজ কনভার্টার। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সিনেমার তারকা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়া জগতের তারকারদেরও ঘিবলি স্টাইল ইমেজ ভাইরাল হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় যারই প্রোফাইল দেখুন তারাই আপলোড করছে ঘিবলি স্টাইল ফোটো। মনে হচ্ছে যেন ঘিবলি না বানালে সমাজ মেনে নেবে না। কিন্তু ঘিবলি কি আসলে শ্রেফ মজা নাকি বিপজ্জনক হতে পারে এই ট্রেন্ড ? কোথা থেকে এল এই জিবলি ?
স্টুডিও জিবলি হল একটি জাপানি অ্যানিমেশন সংস্থা। হাতে আঁকা অ্যানিমেশনের জন্য বিশ্ববিখ্যাত এটি । এই জিবলির ছবি বিভিন্ন অ্যানিমেশন সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালে হায়াও মিয়াজাকি এবং ইসাও তাকাহাতা জিবলির প্রতিষ্ঠা করেন। জিবলি স্টুডিওর অ্যানিমেশন AI-এর মাধ্যমে পৌঁছে গেছে সাধারণ মানুষের হাতে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্স-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে জিবলি স্টাইলের ছবির বন্যা বইছে। শুধু চ্যাটজিপিটি নয়, অনেক এআই টুল ব্যবহার করে নিজের এআই জেনারেটেড ছবি তৈরি করছেন নেটিজেনরা। তারপর তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে গা ভাসাচ্ছেন ঘিবলি জিবলি ট্রেন্ডে। মজার ছলেই এই ট্রেন্ডে সামিল হচ্ছেন লোকজন। কিন্তু এই ঘিবলি জিবলি যতটা মজাদার ততটাই বিপজ্জনও হতে পারে।
স্ট্যাটিস্টার একটি প্রতিবেদন বলছে, ফেশিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির বাজার ২০২৫ সালের মধ্যে ৫.৭৩ বিলিয়ন ডলার এবং ২০৩১ সালের মধ্যে ১৪.৫৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে। ফেসবুক বা গুগলের মতো বড় কোম্পানিগুলি এআই মডেলগুলিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্যবহারকারীদের ছবি ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে ইতিমধ্যে। পিমআইস-এর মতো ওয়েবসাইটগুলি যেকোনও ব্যক্তির ছবি আপলোড করে তাঁর সম্পূর্ণ ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বের করতে পারে। এইসব এআই জেনারেটেড ছবির ফলে স্টকিং, ব্ল্যাকমেইলিং এবং সাইবার অপরাধের ঘটনা আরও বাড়তে পারে ।
তথ্য ফাঁস, পরিচয় চুরি এবং সাইবার জালিয়াতির মতো সমস্যা এড়াতে সতর্ক হতে হবে ব্যবহারকারীদের। কোনও এআই অ্যাপে নিজের ছবি আপলোড করার আগে, ভেবে করুন। তার পাশাপাশি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কী কী সতর্কতা অবলম্বন করলে আপনি সাইবার জালিয়াতি থেকে বাঁচতে পারেন-
১) অবিলম্বে এআই অ্যাপে নিজের ছবি আপলোড বন্ধ করতে হবে।
২) সোশ্যাল মিডিয়ায় হাই রেজলিউশনের ছবি আপলোড না করাই ভালো।
৩) ফেস আনলকের পরিবর্তে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিতে হবে।
৪) কোনও অজানা অ্যাপে ফোনের ক্যামেরার অ্যাক্সেস না দেওয়াই ভালো।
দিন দিন উন্নত হচ্ছে এআই প্রযুক্তি। আজ থেকে ৩বছর পিছনে দেখলেই বোঝা যায় কেমন ঝড়ের গতিতে এর উন্নয়ন হচ্ছে। যা একেবারেই হালকাভাবে নেওয়া উচিৎ নয়। যে কোনও এআই প্ল্যাটফর্মে ছবি আপলোড করলে বড়সড় সমস্যায় পড়তে পারেন।
কয়েক বছর আগে, সোশ্যাল মিডিয়া এবং নিউজ ওয়েবসাইট থেকে ৩ বিলিয়নেরও বেশি ছবি চুরির অভিযোগ উঠেছিল ক্লিয়ারভিউ নামে এক এআই কোম্পানির বিরুদ্ধে। ওই তথ্য পুলিশ এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলির কাছে বিক্রি করা হয়েছিল বলে জল্পনার ঝড় উঠেছিল। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার আউটাবক্স কোম্পানির তথ্য ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষের মুখের স্ক্যান, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ঠিকানা চুরি গিয়েছিল। তারপর হাজার হাজার মানুষ সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। ওই তথ্যফাঁসের কারণেই এই সাইবার জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তদন্তকারীদের একাংশ। তাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন সাবধানে। ট্রেন্ডে গা ভাসাতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না।