রাজ্যে শুধু বানিজ্য সম্মেলন হয় আর বিনিয়োগের প্রস্তাবের খবর হয়, বিনিয়োগ হয় না এক টাকাও। বিরোধীদের এই অভিযোগ উড়িয়ে পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি শুধু কথার কথা নয়, রাজ্যে যে বৃহৎ আকারে বিনিয়োগ হচ্ছে তার উদাহরণ জিন্দল দের এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আক্ষরিক অর্থেই জিন্দল গ্রুপের ১৬ হাজার কোটি টাকার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শিলান্যাস করে উপরের এই কথাগুলো বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- গত ফেব্রুয়ারিতে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট বা বিজিবিএস এর মঞ্চে উপস্থিত থেকে জেএসডব্লু গ্রুপের চেয়ারম্যান তথা এমডি সজ্জন জিন্দল ঘোষণা করেছিলেন এরাজ্যে তাঁদের সিমেন্ট কারখানার পাশাপাশি তাঁরা একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে চলেছেন। সেদিনই তিনি জানিয়েছিলেন প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনিতে জেএসডব্লু এনার্জি একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে চলেছেন। এত বড় মাপের বিনিয়োগের এই প্রস্তাব আসার পর দ্রুততার সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মুখ্যসচিবের পৌরহিত্যে বিনিয়োগের জন্য গঠিত সিনার্জি কমিটি বিষয়টির তদারকি করেন। তারপর কয়েকদিন আগে নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রীও জানান যে জিন্দলদের প্রস্তাবিত এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের শিলান্যাস করবেন তিনি। সেই মোতাবেক সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনিতে জিন্দল গ্রুপের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শিলান্যাস করা হলো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জিন্দল গোষ্ঠির চেয়ারম্যান সজ্জন জিন্দল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, জেএসডব্লু এনার্জি গ্রুপের পার্থ জিন্দল, সৌরভ গাঙ্গুলি, বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সাংসদ দেব, জুন মালিয়া প্রভৃতি। বিরোধীদের জবাব দেওয়ার জন্য এই মঞ্চই বেছে নেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন তাঁর বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা একটা ল্যান্ড মার্ক প্রজেক্ট।” এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়ে গেলে সারা রাজ্যই উপকৃত হবে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা হলে ২৩ জেলার মানুষ উপকৃত হবেন। পূর্ব ভারতে এই ধরনের প্রজেক্ট এর আগে কখনও হয় নি। ইকো ফ্রেন্ডলি এই প্রজেক্টে ১৫ হাজার মানুষ কাজ পাবেন।”
বাম সরকারকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “আগে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বারো ঘন্টাই বিদ্যুৎ থাকতো না। তাই লোকে বলতো লোডশেডিং এর সরকার, আর নেই দরকার। কিন্তু এখন ২৪*৭ বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।” একটা সময় রাজ্যে বিদ্যুতের উপভোক্তা ছিলো ১ কোটি ৭ লক্ষ। সেই সংখ্যা এখন বেড়ে ২ কোটি ৩০ লক্ষ হয়েছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগামি দিনে আরো প্রায় ২ কোটি মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন। তাই সেই সময়ের কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার আরও প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুতের জন্য খরচ করবে। জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “অনেকে বলেন বাংলায় তো কিছুই হয় না। তারা জেনে রাখুন, বিজিবিএস এ যে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে তার মধ্যে ইতিমধ্যেই রাজ্যে ১৩ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে।”
এই প্রসঙ্গেই বিরোধীদের ঠেস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “আপনারা আমার সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু আমাকে উপেক্ষা করতে পারবেন না।”