মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে ৯ টি জায়গার ২১ টি জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। মাত্র ২৫ মিনিটের সফল অপারেশনে শুধু যে পহেলগাঁও এর জঙ্গি হামলার বদলা নেওয়া হয়েছে তা নয়, একই সঙ্গে বদলা নেওয়া হয়েছে ২০০৮ এর মুম্বাই জঙ্গি হানা সহ ২০১৯ এর পুলওয়ামা জঙ্গি হামলারও।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও এ জঙ্গি হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠছিলো আসমুদ্র হিমাচলের সব প্রান্ত থেকে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে নেওয়া হল প্রথম পদক্ষেপ (বদলা)। আর সেই সঙ্গে কিছু পুরনো হিসাব ও মিটিয়ে নিল ভারত। পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের যে ২১ টি জঙ্গি আস্তানা ভারত গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য দুটি জায়গা হলো বাহওয়ালপুর ও মুরিদকে। ভারতের মাটিতে বারবার সীমান্তপার সন্ত্রাসের মূল দুই আসামী জঙ্গি মাসুদ আজহার ও হাফিস সৈয়দ এর সদর দফতর হলো এই দুই এলাকার দুটি মসজিদ, যা মঙ্গলবার ভারত গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
২০০৮ সালের নভেম্বরে ভারতের ভিত নড়ে গিয়েছিলো মুম্বাইয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায়। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এই হামলার দায় স্বীকার করে। এই লস্করের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আস্তানা হলো পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তর্গত মুরিদকে শহরের একটি মাদ্রাসা, যার নাম মারকাজ তৈয়াব। এই হলো সেই মাদ্রাসা যেখানে জঙ্গি কার্যকলাপের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো কুখ্যাত জঙ্গি আজমল কাসভ। এই হলো সেই মাদ্রাসা যেখানে এসেছিলো মুম্বাই হামলার অন্যতম চক্রী ডেভিড হেডলি ও তাহাঊর হুসেন রানা। এই হলো সেই মাদ্রাসা যেখানে মাদ্রাসার আড়ালে আসলে জঙ্গি কার্যকলাপের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাতের হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে লস্কর-ই-তৈয়বার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই জঙ্গি কারখানা।
মুরিদকের জঙ্গি মাদ্রাসা ধংসের পাশাপাশি পাকিস্তানের আরেক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ এর প্রধান মাসুদ আজহারের সদর দফতর মারকাজ শুভান আল্লাহ মাদ্রাসাও একেবারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামায় যে নৃশংস জঙ্গি হামলা হয়েছিলো, যে হামলায় শহীদ হয়েছিলেন সেনা জওয়ানেরা, সেই হামলার মাস্টার মাইন্ড হলো জৈয়শ কামান্ডার মাসুদ আজহার। তার অর্থে চলা এই মাদ্রাসাও আসলে মাদ্রাসার আড়ালে জঙ্গি তৈরির কারখানা। সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের আঘাতে মাসুদ আজহারের ভাই, জৈয়শ ই মোহাম্মদ এর কার্যকরি প্রধান মুফতি আব্দুর রঊফ গুরুতর আহত হয়ে আশংকাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। খবরে প্রকাশ ইতিমধ্যেই ভারতের আক্রমণে মারা গিয়েছে মাসুদ আজহারের পরিবারের ১০ থেকে ১৪ জন সদস্য, যারমধ্যে রয়েছে রঊফ আসগরের ছেলে হুফেজা ও তার স্ত্রী। এটাও শোনা যাচ্ছে মাসুদ আজহার নাকি পরিবারের এতজন সদস্যের মৃত্যুর খবরে মুছড়ে পড়ে বলেছে ‘আমি কেন মারা গেলাম না।’ বোঝাই যাচ্ছে ভারতের এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবার ‘জঙ্গিস্তানের’ বেশ গভীরেই আঘাত হেনেছে।