ভারতে এশিয়াটিক সিংহের সংখ্যা বিগত ৫ বছরে বেড়েছে ৬৭৪ থেকে ৮৯১ তে। শতকরা ৩২ শতাংশ বেড়েছে সিংহের সংখ্যা, যা সর্বকালীন রেকর্ড হিসাবে ধরা হচ্ছে। ৪ দিনে প্রায় ৩৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে গণনার কাজ হয়। যা গুজরাটের গির এবং একাধিক জঙ্গল ও করিডর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত।
সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- দিন কয়েক আগেও অসন্তোষ ছিল গুজরাট পাকিস্তান সীমান্তে, এখনও সেখানে চাপা উত্তেজনা রয়েছে। এরই মধ্যে সুখবর শোনালো গুজরাট প্রশাসন। উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে গুজরাটে সিংহের সংখ্যা। এমনটাই জানালো গুজরাটের ভাবনগরের বনকর্মীরা। প্রায় ৩ হাজার বনকর্মী সে রাজ্যের ১১টি জেলায় সিংহ গুনে অন্তত এমনটাই জানিয়েছে। মে মাসের ১০ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত গোনা হয় সিংহ। ভারতে এশিয়াটিক সিংহের সংখ্যা বিগত ৫ বছরে বেড়েছে ৬৭৪ থেকে ৮৯১ তে। শতকরা ৩২ শতাংশ বেড়েছে সিংহের সংখ্যা, যা সর্বকালীন রেকর্ড হিসাবে ধরা হচ্ছে। ৪ দিনে প্রায় ৩৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে গণনার কাজ হয়। যা গুজরাটের গির এবং একাধিক জঙ্গল ও করিডর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। গত ৩রা মার্চ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরহিত্যে ন্যাশনাল বোর্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফের যে বৈঠকটি হয়, সেই বৈঠকেই সাসান-গিরে ১৬তম সিংহশুমারির দিনক্ষণ ঠিক হয়। পহেলগাঁও হামলা পরবর্তী সীমান্ত সংঘর্ষের আবহেও সেই দিনক্ষণ বদলানো হয়নি। গোটা বিশ্বের মধ্যে মুক্ত বনাঞ্চলের মধ্যে একমাত্র গির অরণ্য এবং গ্রেটার গির ল্যান্ডস্কেপেই এশিয়াটিক সিংহ পাওয়া যায়। ১০ বছর আগের ২০১৫ সালের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে সিংহের সংখ্যা ছিল ৫২৩টি, যা ২০২৫ সালে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮৯১টি। গুজরাটে সিংহ বেড়েছে ৭০ শতাংশের বেশি। গত এক দশকে নিজেদের বিচরণভূমিও প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে ফেলেছে এশিয়াটিক সিংহ। গির জাতীয় উদ্যানে এশিয়াটিক সিংহের মূল আবাসে (সোর্স পপুলেশন) যেমন ১৫ শতাংশ বেড়েছে তেমনই গুজরাটের সীমান্ত এলাকায় অর্থাৎ পোরবন্দরের বারডা অভয়ারণ্যে গত ৫ বছরে প্রথমবার সিংহের নতুন বসতির দেখা পাওয়া গেছে। বারডায় আপাতত ১৭টি সিংহের বাস। নতুন সেই বিচরণক্ষেত্র (স্যাটেলাইট পপুলেশন) বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য। কারণ, ১৮৭৯-র পরে অর্থাৎ প্রায় ১৪৬ বছর পর বারডা অভয়ারণ্যে সিংহের অস্তিত্বের প্রামাণ্য তথ্য এই প্রথম সামনে এল। বারডার মতোই উল্লেখযোগ্য হারে, প্রায় ১০০ শতাংশ হারে সিংহ বেড়েছে গিরের পূর্বদিকে, মিটিয়ালা অভয়ারণ্যে।
২০২০ সালে সেখানে ছিল ১৬টি সিংহ, বর্তমানে সেখানে কমপক্ষে ৩২টি সিংহের আবাস। মূল সংরক্ষিত জঙ্গলের বাইরে করিডর এলাকায় প্রায় ২২টি সিংহের দেখা পাওয়া গেছে। গুজরাটে সিংহ গোনার কাজে, জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির পাশাপাশি এই প্রথম এআই টেকনোলজির ‘সিম্বা’ অ্যাপের ব্যবহার করা হয়েছে। এই অ্যাপটি মূলত সিংহের ছবি থেকে তাদের গোঁফের তারতম্য খুঁজে বের করে জানায়, কতগুলি ‘ইউনিক’ সিংহ জঙ্গলে রয়েছে। কারণ প্রতিটি সিংহের গোঁফের প্যাটার্ন আলাদা হয়। ঠিক যেমন বাঘের গণনার জন্য এম-স্ট্রাইপ অ্যাপ ব্যবহার করা হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে বাঘের শরীরের ইউনিক হলুদ-কালো ডোরাকাটা প্যাটার্নের খোঁজ পাওয়া যায়। সিংহের বিপুল বৃদ্ধি খুশির খবর হলেও এরই মধ্যে রয়েছে চ্যালেঞ্জও। এশিয়াটিক সিংহের মূল বসবাস গির এবং গিরনারের ২০০০ বর্গ কিলোমিটার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে বেড়েছে সিংহের সংখ্যা। মোট ৮৯১টি সিংহের মধ্যে গিরের জঙ্গলে সিংহ মাত্র ৩৮৪টি। গিরনারে সিংহ কমেছে শতাংশ। ৫০৭টি সিংহ রয়েছে সংরক্ষিত এলাকার বাইরে। তাই সিংহের সংখ্যা বৃদ্ধি যতটা আশার ঠিক তেমনই আগামী দিনে ইনোভেটিভ সংরক্ষণ মডেল কার্যকর করা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।