আত্মহত্যার আগে বারবার সবাইকে বলেছিল ক্লাস সেভেনের কৃষ্ণেন্দু যে সে চিপস চুরি করেনি। সিসিটিভি ফুটেজও বলল সেই কথাই। সে চুরি করেনি। দোষ তার নয়। কিন্তু কি লাভ! কৃষ্ণেন্দু তো আর ফিরবে না।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিক: সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কৃষ্ণেন্দুর শেষ চিঠির প্রতিটি দাবি যে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি সেটি ফুটে উঠল দোকানের সামনে থাকা সিসি ক্যামেরাতে। সেখান থেকেই দেখা গেল দোকানের সামনে এসে সে খানিকক্ষণ দোকানিকে খুঁজতে থাকে। এরপর মাটিতে পড়ে থাকা চিপসের প্যাকেট নিয়ে চলে যায়। এমনকি পরে তাকে যে মায়ের শাসনের সামনে পড়তে হয়েছে সেই ছবিও ফুটে ওঠে ক্যামেরাতে।
গত রবিবার ওই ছাত্র বাজারে বেরিয়েছিল চিপস কিনতে। পরিবারের অভিযোগ, যে দোকানে গিয়েছিল, সেখানে দোকান খোলা রেখে দোকানদার ছিলেন না। দোকানের বাইরে পড়ে থাকা একটি চিপসের প্যাকেট কুড়িয়ে নেয় সে। পয়সা ছিল তার কাছে। দোকানদারকে পরে এসে দেবে ভেবেছিল। এরপর বাড়ি ফেরার পথে দেখা হয় দোকানদারের সঙ্গে। দোকানের মালিক পেশায় একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁর দোকানের চিপস নিয়ে চলে যাচ্ছে বলে ধাওয়া করে ওই কিশোরকে ধরে ফেলেন। অভিযোগ উঠেছে দোকানদার তাকে প্রকাশ্যে চুরির অপবাদ দেন। কান ধরে ওঠবস করান এবং মারধরও করেন। কিশোরের বাবা-মায়ের দাবি, চিপসের দাম সেসময় পরিশোধও করেছিল সে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে মা ছেলেকে শাসন করেন। এরপর তাকে বাড়ি নিয়ে যান।
কিন্তু চোর অপবাদ আর অপমান সহ্য করতে না পেরে ওই কিশোর একটি সুইসাইড নোট লিখে বাড়িতে থাকা কীটনাশক খেয়ে নেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় তমলুক মেডিক্যাল কলেজে। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয় তার।
এই ঘটনা নি:সন্দেহে এক সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে। এ কোন সমাজ? যে কিনা বাচ্চার কথা শুনতে নারাজ! বাচ্চা মানেই যে ভুল করে মিথ্যে কথা বলবে এমনটা তো নাও হতে পারে। অনেক সময়েই দেখা যায় বাচ্চারা কোন ভুল করলে পরে বকা খাওয়ার ভয়ে তা স্বীকার করতে চায়না। কিন্তু কৃষ্ণেন্দু বারবার বলেছিল সে চিপস চুরি করেনি। বিশ্বাস করা হয়নি তার কথা। আর শিশুমন প্রকাশ্যে এভাবে হেনস্থা মানতে পারেনি। বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ। অনেকেই বলেন বাচ্চাদের মন খারাপ হয়না। ভুল! ওরাও অবসাদগ্রস্ত হয়, আত্মসম্মান বোধ আছে ওদেরও। নিজের জীবন দিয়ে কৃষ্ণেন্দু এটাই প্রমাণ করে গেল