মাম্পি রায়, সাংবাদিক- পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানকে কড়া জবাব দিয়েছে ভারত। অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটি। অপারেশন সিঁদুরের পাশাপাশি পাকিস্তানের মুখোশ টেনে ছিঁড়ে তাদের স্বরূপ সকলের সামনে তুলে ধরার কাজ করছেন সর্বদল প্রতিনিধিরা। বিভিন্ন দেশে গিয়ে ভারতের অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য তুলে ধরছেন তাঁরা। হিন্দু-মুসলিম, শাসক-বিরোধী সমস্ত বিভাজন উড়িয়ে দেশের হয়ে প্রচার করছেন সমস্ত রাজনৈতিক দলের সদস্যরা। কিন্তু সেটা করতে গিয়েই কার্যত গৃহযুদ্ধ লাগলো কংগ্রেসের সংসারে। সর্বদল প্রতিনিধি হিসেবে শশী থারুরকে বেছে নেওয়া নিয়ে আগেই জলঘোলা হয়েছিল। এবার তো সটান কংগ্রেস নেতা উদিত রাজ বলে বসলেন, শশী থারুরকে নিজেদের মুখপাত্র বানিয়ে নিক বিজেপি। এমন কী হল ? যে শশীকে নিয়ে এমন ঝাঁঝালো প্রতিক্রিয়া দিতে বাধ্য হলেন কংগ্রেস নেতা ?আসলে সর্বদল প্রতিনিধদলের সদস্য শশী থারুর পানামা সফরে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে বলে বসেন, মোদী সরকারই সর্বপ্রথম সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছে। পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গিদের খতম করা হয়েছে। কার্গিলেও এলওসি পেরনো হয়নি। উড়িতে এলওসি পেরিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল।এরপরই থারুরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, পবন খেরা ও উদিত রাজ। মোদী সরকারের আগে ইউপিএ আমলে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়া এক্স হ্যান্ডলে কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, মনমোহন সিংয়ের জমানায় একাধিক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হয়েছে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত ভিডিও শেয়ার করেন কংগ্রেস নেতা। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা উদিত রাজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপর চাপসৃষ্টি করতে পারলে খুশি হতাম, যাতে বিজেপি আপনাকে মুখপাত্র ঘোষণা করে। ভারতে আসার আগেই বিদেশমন্ত্রী একথা ঘোষণা করে দিন। প্রধানমন্ত্রী মোদীর আগে কখনও এলওসি পার করে হামলা চালানো হয়নি? এমন বলে আপনি কংগ্রেসের স্বর্ণময় ইতিহাসকে কালিমালিপ্ত করে কংগ্রেসকে বদনাম করার চেষ্টা করেছেন। ১৯৬৫ সালে ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের একাধিক জায়গায় প্রবেশ করে হামলা চালিয়েছে। লাহোর সেক্টরে তো পাকিস্তানিরাই অবাক হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তানকে দু-টুকরো করে দিয়েছিল। ইউপিএ সরকারের আমলে একাধিক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে এর ঢোল পেটানো হয়নি। যে পার্টি আপনাকে এতকিছু দিল, তার প্রতি আপনি এতটা বেইমানি কী করে করতে পারেন ? শশী থারুরের দিকে এমনই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা উদিত রাজ।পানামা নিয়ে মন্তব্যের জেরে কংগ্রেসের আক্রমণের জবাব দিতে বিশেষ সময় নষ্ট করেননি শশী থারুর। গুড নাইট পোস্টের মাধ্যমেই হালকা চালে পবন খেরা বা উদিত রাজের মতো নিন্দুকদের নাম না করে জবাব দিয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে শশী থারুর লিখেছেন, পানামায় সাফল্যের সঙ্গে বক্তব্য রাখলাম। এবার কলম্বিয়ার বোগোটার উদ্দেশে যাচ্ছি। হাতে বিশেষ সময় নেই লিখে শশী থারুরের পোস্ট- প্রথমত, আগের সন্ত্রাসবাদী হামলার কথা বলতে চেয়েছি, আগের যুদ্ধের ব্যাপারে নয়। দ্বিতীয়ত, আমার বক্তৃতার আগে সাম্প্রতিককালের একাধিক হামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে এলওসির কথা মাথায় রেখে সংযম ও সীমার মধ্যে থেকে জবাব দিয়েছে ভারত। এরপরও সমালোচকরা যদি আমার কথার মধ্যে ত্রুটি বের করতে চান, তাঁদেরকে স্বাগত। আমার অনেক ভালো কাজ করতে হবে । শুভরাত্রি।
এই এক্স হ্যান্ডল পোস্টে নজর রাখলে বোঝা যায়, মোদী সরকারের আমলে প্রথম সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল, এই বক্তব্য থেকে পিছিয়ে আসেননি শশী থারুর। বরং তিনি বললেন, তাঁর কথার উল্টো অর্থ বের করা হচ্ছে। এরপর পবন খেরার মতো নেতাদের গলায় নরম সুর শোনা গিয়েছে।থারুর যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে, উড়ির পর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সাল ২০১৫-য় বলা হয়েছে। তা ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর হবে। পুলওয়ামা হামলার তারিখও ২০১৮ জানুয়ারি বলেন শশী থারুর। যদিও পুলওয়ামা সিআরপিএফের গাড়িতে হামলা হয়েছিল২০১৯-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি। শশী থারুর একাধিক বক্তব্য রাখেন, যা পার্টি লাইন থেকে আলাদা হয়। বেশ কয়েকবার তো জয়রাম রামেশকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলতে হয়েছে যে, শশী থারুর যা বলেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত বয়ান। সর্বদল প্রতিনিধিদের তালিকায় শশী থারুরের নাম না থাকা সত্বেও যখন মোদী সরকার শশীর নাম যোগ করে, তখন থেকেই শশীর উপর ক্ষুব্ধ কংগ্রেসের একাংশ। আমেরিকা ও লাতিন আমেরকার দেশগুলিতে শশী থারুরের নেতৃত্বে সর্বদল প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছে মোদী সরকার। থারুর মনে করেন তিনি যথেষ্ট যোগ্য, কিন্তু কংগ্রেস তাঁকে বিশেষ কিছু করতে দিচ্ছে না। সংসদে আলোচনার সময় কংগ্রেসের বক্তার তালিকায় না থাকায় ক্ষুব্ধ শশী। আগামী বছর মে মাসে কেরলে ভোট। সূত্রের খবর তিরুবনন্তপুরমের সাংসদ শশী থারুর চান কেরল বিধানসভা ভোটের আগে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হোক বা কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হোক। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব সেদিকে বিশেষ নজর দেবে বলে মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।