প্রতি বুথের ভিতর এতোদিন ওয়েবকাস্টিং করা হতো, এবার বুথের বাইরে একশো মিটারের ভিতর কি ঘটছে তা লাইভ স্ট্রিমিং বা ওয়েবকাস্টিংয়ের মাধ্যমে কমিশন নজরবন্দী করতে পারবে।
সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- সামনেই রাজ্যে উপনির্বাচন। পরিকল্পনা চলছিল অনেকদিন ধরেই, এবার তা বাস্তবায়িত হতে চলেছে নদীয়া জেলার কালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে। এতদিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ওয়েব কাস্টিং এর মাধ্যমে বুথের ভিতরের সমস্ত গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারত নির্বিঘ্নে। তবে এবারে প্রথম বুথের বাইরেও থাকছে লাইভস্ট্রিমিং বা ওয়েব কাস্টিং এর ব্যবস্থা। এতদিন পর্যন্ত সাধারণ মানুষ ভোটের লাইনে দাঁড়ালে নিজের কাছে মোবাইল ফোন রাখা যেত না। সেই নিয়মের বদল ঘটল। ভোটাররা ভোটের লাইনে নিয়ে যেতে পারবেন মোবাইল ফোন তবে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে সুইচ অফ রাখতে হবে মোবাইল। প্রতি বুথের বাইরে থাকবেন বুথ লেভেলের অফিসার এবং তাঁর সঙ্গে থাকবেন একজন সহকারী। তাঁদের কাছে থাকবে একটি বাক্স, যেখানে মোবাইল সুইচ অফ অবস্থায় জমা রেখে সেই বুথের যে কোনও ভোটার বুথের ভিতরে গিয়ে নিজের ভোটদান করে আসতে পারবেন। কোনও ভোটার যখন ওই ফোন বাক্সের ভিতর রাখবেন তখন বুথ লেভেলের অফিসার তাঁকে একটি টোকেন দেবেন যা ভোট দিয়ে বেরোনোর পর ওই টোকেন জমা দিয়ে নিজের মোবাইল ফেরৎ পাবেন।
এই প্রক্রিয়ায় এবার নির্বাচন কমিশন পাঁচ রাজ্যের উপনির্বাচন দিয়েই পরীক্ষামূলক ভাবেই শুরু করতে চলেছে গোটা দেশে। প্রতি বুথের ভিতর এতোদিন ওয়েবকাস্টিং করা হতো, এবার বুথের বাইরে একশো মিটারের ভিতর কি ঘটছে তা লাইভ স্ট্রিমিং বা ওয়েবকাস্টিংয়ের মাধ্যমে কমিশন নজরবন্দী করতে পারবে। স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় কমিশন সমস্ত ভোটারদের নজরবন্দী করতে পারবে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছে তা কমিশনের উন্নতিতে এই প্রয়াস অবশ্যই করতে পারেন। রাজ্যে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন, তার আগে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পদে জ্ঞানেশ কুমার যোগদান করার পর থেকেই যে যে পদক্ষেপ এখনও পর্যন্ত করেছেন তাতে সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি একদিকে যেমন আশার আলো দেখছে তেমনই সাধারণ মানুষও আশায় যে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। দীর্ঘদিন ধরেই বুথের বাইরে মারপিট, বোমাবাজি থেকে শুরু করে দুষ্কৃতীদের একচ্ছত্র তাণ্ডব চলে আসছে, যা রুখতে এবার নির্বাচন কমিশন রীতিমতো কোমড় বেঁধে নেমে পড়েছে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে স্বচ্ছতার সঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
একদিকে শিয়রে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন এরাজ্যে পাশাপাশি তার আগেই নদীয়া জেলার কালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচন। সুতরাং নিজেদের কাজের প্রস্তুতি হিসেবেই নয়া পদক্ষেপকে পাইলট হিসাবে দেখছে নির্বাচন কমিশন। সেই কারণেই এই প্রথমবার বুথের বাইরেও লাইভ স্ট্রিমিং বা ওয়েবকাস্টিং করা হতে চলেছে বলেই নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর যা নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এই প্রথমবার হতে চলেছে। এতোদিন ধরে শাসক- বিরোধী তরজায় বুথের বাইরে ঘটে চলা ঘটনা নিয়ে বহু অভিযোগ রীতিমতো ধন্দে ফেলে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। তবে বুথের বাইরে লাইভ স্ট্রিমিং বা ওয়েব কাস্টিং-এর মাধ্যমে সবকিছু নজরবন্দী করার মতো সিদ্ধান্ত অনেকটাই স্বচ্ছতা আনবে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। উপনির্বাচন হলেও নির্বাচন কমিশন কোনও রকম গাফিলতি রাখতে চাইছে না কালিগঞ্জের এই নির্বাচনে। এই উপনির্বাচনকেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মহড়া হিসেবে ধরেই এগোতে চাইছে নির্বাচন কমিশন।