পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রামে নেমেছে বালোচিস্তান। ইতিমধ্যেই তাঁরা (বালোচ বিদ্রোহীরা) পশ্চিম পাকিস্তানের অনেকটা অংশকে ‘স্বাধীন বালোচিস্তান’ বলে ঘোষণাও করে দিয়েছে। নিজেদের স্বাধীন দেশের পতাকা প্রকাশ করে ভারত সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে (পাকিস্তান বাদে) বালোচিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসাবে মান্যতা দেওয়ার আবেদনও করেছে। বালোচদের এই স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গেই জড়িয়ে গিয়েছে মারাঠাদের নাম। জানতে পুরোটা পড়ুন।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- পাকিস্তান যখন তার পূর্ব সীমান্তে ভারতের সঙ্গে ছদ্ম যুদ্ধে নেমেছে; তখন সেদেশের পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে স্বাধীন বালোচিস্তান এর দাবীতে আন্দোলনে নামা বালোচ বিদ্রোহীদের হাতে। প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে বালোচ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আক্রমণে হয় নিহত হচ্ছে পাক সেনা, নয়তো জীবন নিয়ে পালাচ্ছে পাক পুলিশ। স্বাধীন বালোচিস্তান এর দাবি জানানো এই বালোচ বিদ্রোহীদের একটা বড় অংশের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ১৭৬১ সালের পানিপথ যুদ্ধের ইতিহাস। কি সেই ইতিহাস ? কেন বালোচ যোদ্ধাদের অনেকেই এখনও ছত্রপতি শিবাজীর নামে মাথা নত করেন ? কেন পাকিস্তানের বালোচ প্রদেশের অনেকের বাড়িতে লুকিয়ে রাখা থাকে শিবাজীর ছবি ?
এই তথ্য জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় ২৬৪ বছর। ১৭৬১ সাল, পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ। আহমেদ শাহ আবদালীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হন মারাঠারা। প্রায় ২২ হাজার মারাঠাকে যুদ্ধ বন্দি করে আহমেদ শাহ আবদালী উপহার হিসাবে দিয়ে দেয় বালোচিস্তানের(তখন আফগানিস্তানের অংশ) মীর নাসির খান নুরী-কে। যুদ্ধবন্দী সেই সব মারাঠাদেরকে ক্রীতদাস হিসাবে ব্যবহার করা হতো। নিজেদের জীবন রক্ষার্থে তাঁদের অনেকেই মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মারাঠারা বালোচিস্তানের আদিবাসীদের মধ্যে নিজেদের মিশিয়ে নেন। তাঁদের পরিচিতি হয় ‘বালোচ মারাঠা’ নামে। এই বালোচ মারাঠাদের পরিচিতি আবার বোঝা যায় তাঁদের টাইটেল থেকে। ‘পেশোয়ানি’, ‘বুগতি’, ‘নোথানি’, ‘মোশানি’, ‘কালপার’, ‘শাম্ভানী’ সহ মোট ২০ টি ট্রাইবাল প্রজাতি রয়েছে বালোচিস্তানে যাদের এইসব টাইটেলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে ‘মারাঠা’ শব্দটিও। বিভিন্ন তথ্যে প্রকাশ এখন প্রায় ২০ লক্ষ ‘বালোচ মারাঠি’ রয়েছেন পৃথিবী জুড়ে, যাদের একটা বড় অংশই এখন বালোচিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামের ও অংশ।
এই মুহূর্তে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত, পাকিস্তানের শাসকের কাছে যে সব জঙ্গি গোষ্ঠী (বালোচ বিদ্রোহীরা) নিষিদ্ধ তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো ১) ‘বালোচ লিবারেশন আর্মি’, ২) ‘বালোচ রিপাবলিকান আর্মি’, ৩) ‘বালোচ রিপাবলিকান গার্ড’, ৪) ‘বালোচ লিবারেশন ফ্রন্ট’, ৫) ‘বালোচ ন্যাশানালিস্ট আর্মি’, ৬) ‘ইউনাইটেড বালোচ আর্মি’ সহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন। এর প্রতিটি সংগঠনেই কমবেশি ‘বালোচ মারাঠা’ জনজাতি গোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এমনকি কয়েকটি বিদ্রোহী সংগঠন তো সরাসরি বালোচ মারাঠাদের দ্বারা পরিচালিত। সম্প্রতি পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশে যে জাফরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন হাইজ্যাক করা হয়েছিলো, সেই ঘটনাতে অনেকটাই দায়িত্ব নিয়েছিলেন গেরিলা যুদ্ধে পারদর্শী এই বালোচ মারাঠারা।