অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। পেটে খিদে থাকলেও পড়াশোনায় মনোযোগ কমেনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার দিশা দপ্তরী। দারিদ্র্যতার মধ্যেও এবার মাধ্যমিকে ৭০০ র মধ্যে ৬১৩ নম্বর পেয়ে পরিবারের নতুন আলোর দিশা দেখালো সে।
নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক- অদম্য জেদ ও লক্ষ্য স্থির থাকলে সব সম্ভব। তা প্রমান করল দক্ষিণ ২৪ পরগনার দিশা দপ্তরী। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৭০০ মধ্যে ৬১৩ নম্বর পেয়েছে দিশা। দিশার বাবা বিশ্বনাথ দিনমজুর আর মা সুমিত্রা গৃহবধূ। বড়ই অভাবের সংসার। কোনও রকমে দিনকাটে। ঠিকমত খাওয়া না জুটলেও মন দিয়ে পড়াশোনা করেছে দিশা। আর তার ফলস্বরূপ এই রেজাল্ট। বাবা- মা খুব একটা পড়াশোনা না জানলেও মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন তারা। মাধ্যমিকের ফলে আনন্দিত দিশার বাবা ও মা। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবনের মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুল থেকে মোট ৭০০ এর মধ্যে ৬১৩ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে সে। গণিত ছাড়া সাতটি বিষয়ের মধ্যে প্রতিটি বিষয়েই লেটার মার্কস তার। বিষয় ভিত্তিক তার প্রাপ্ত নম্বর বাংলায় ৯৪, ইংরেজিতে ৮০, অংকে ৭৭, পদার্থ বিজ্ঞানে ৯০, জীবন বিজ্ঞানে ৮৫, ইতিহাসে ৯৪ এবং ভূগোলে ৯৩। দিশার ফলাফলে খুশি স্কুলের শিক্ষকেরাও।কৃষ্ণচন্দ্র পুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, চন্দন মাইতি বলেন, “ঐ ছাত্রীটি কঠোর পরিশ্রম করে এই সাফল্য এনেছে। আগামী দিনে ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। আমরাও সাধ্যমত ওর পাশে বিগত দিনে দাঁড়িয়েছি, আগামী দিনেও থাকার চেষ্টা করব।”
দিশার পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে এগিয়ে চলেছে দিশা আর তার দুই দাদার পড়াশোনা। দিশার কথায় ,”যে কোন মূল্যে আমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আমার বাবা-মার দারিদ্রতা ঘোচাতে হবে। তার জন্য উচ্চমাধ্যমিকে কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করে নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে আগামী দিনে আরো ভালো ফলাফল করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাব। বাড়ির আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কি করে এই সীমাবদ্ধতা কাটাবো বুঝে উঠতে পারছি না। কোন সহৃদয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি আমার পড়াশোনার খরচ চালানোর দায়িত্ব নেন, আমি চির কৃতজ্ঞ থাকব।” প্রসঙ্গত দিশার দুই দাদাও বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা। উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে তারাও প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। দিশাও ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চায় সে।