মাধ্যমিকের পর উচ্চমাধ্যমিকেও ভালো ফল করে অবাক করেছে শ্রেয়া সাহা। তার ইচ্ছেশক্তির কাছে হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের বাসিন্দা শ্রেয়া জন্ম থেকেই ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। বিশেষ ভাবে সক্ষম শ্রেয়ার পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ আর অদম্য প্রয়াসেই তার এই সাফল্যের চাবিকাঠি।
নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক
নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের ছোট্ট এককামরা ঘরে মা-বাবার সঙ্গে থাকে শ্রেয়া সাহা। জন্ম থেকেই ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। নিজে থেকে বসা বা হাঁটাচলার ক্ষমতা নেই তার। হাতেও নেই জোর। হুইলচেয়ারই ভরসা। সেই হুইলচেয়ারে বসেই ২০২৩ সালে মাধ্যমিককে সবাইকে অবাক করার মত ফল করেছিল সে। সমস্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে মাধ্যমিকে ৭০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয় বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের এই ছাত্রী। রেজাল্ট ভালোর ধারা উচ্চমাধ্যমিকেও বজায় রয়েছে। শত প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ৮১ শতাংশ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়েছে শ্রেয়া। পড়াশেনার পাশাপাশি কবিতা পাঠও শ্রেয়ার খুব প্রিয়।শ্রেয়ার এই লড়াইয়ে অন্যতম ছায়াসঙ্গী তার মা জোনাকি সাহা। প্রতিদিন মেয়ের সঙ্গে তিনিও নিয়মিত স্কুলে গেছেন। তিনিই শ্রেয়ার প্রথম শিক্ষাগুরু। তাই মেয়ের এই সাফল্যে মায়েরও জয়।
হাতে পায়ে জোর নেই। শুয়ে শুয়েই যেমন পড়াশোনা করে শ্রেয়া তেমনি লেখার সময় থুতনিতে পেন রেখে আর এক হাত দিয়ে ঘষে ঘষে লেখে সে। তাই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে তাকে রাইটার নিতে হয়েছিল। বেথুন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শবরী ভট্টাচার্য বলেন, “ও সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গেই পড়াশোনা করেছে। আমাদের তরফ থেকে যেটুকু করা হয়েছে সেটা আমাদের কর্তব্যই বলব। তবে যেটা বলার ওর অদম্য ইচ্ছা , মানসিক জোর এবং ভেতরের চেষ্টা আর ওর অভিভাবকের অপরিসীম ধৈর্য্য। ওর মা ওকে স্কুলে নিয়ে আসতেন এবং সারাদিন বসে থাকতেন। তারপর স্কুল শেষ হলে ওকে নিয়ে যেতেন। হুইল চেয়ারে বসে থাকত, হুইল চেয়ার সহ ওকে ক্লাসরুমে নিয়ে যাওয়া হত, ওর সামনে একটা ছোটও টেবিল দিয়ে দেওয়া হতো ও তাতে পড়াশোনা করত । যে শিক্ষিকারা ওকে পড়িয়েছেন তারা বলতেন ও খুব মনোযোগী। “
উচ্চ মাধ্যমিকের শ্রেয়া হিউম্যানিটিজ নিয়ে পড়েছে। শারীরিকভাবে সে সক্ষম না হলেও ভালো রেজাল্ট করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এই ছাত্রী। উচ্চ মাধ্যমিকে ৮১ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে। বুধবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলে স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা মার্কশিট ও সার্টিফিকেট নিয়েছে। শ্রেয়াও এদিন স্কুলে গিয়ে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট নেয়। শ্রেয়ার সাফল্যে খুশি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা।