দীর্ঘ জল্পনা ও টালবাহানার পর অবশেষে সাংগঠনিক রদবদল করলো তৃণমূল কংগ্রেস। আর এই রদবদলে উল্লেখযোগ্য অবশ্যই বীরভূম জেলা সভাপতি পদ থেকে অনুব্রত মন্ডলের অপসারণ। পাশাপাশি উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলাতেও আর থাকলো না কোনো সভাপতি পদ।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- ২০২৪ এর ২১ জুলাই শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন তিন মাসের মধ্যে দলে একটা বড়সড় সাংগঠনিক বদল করা হবে। যারা নির্বাচনে (লোকসভা নির্বাচন’২০২৪) ভালো ফল করে নি তাদের পাশে থাকবে না দল। অভিষেকের এই বক্তব্যের পর কেঁটে গিয়েছে ১০ মাস। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার রদবদলের সম্ভাবনা দেখা দিলেও আখেরে শেষ পর্যন্ত কোনো এক অজানা কারণে দল পিছিয়ে যায়। তবে ২০২৫ এর বিধানসভা নির্বাচনের অনেকটা আগেই, অবশেষে সেই কাজটা সেরে ফেললো তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে যে তালিকা (রদবদলের) দেওয়া হয়েছে তাতে অবশ্যই বড়সড় চমক রয়েছে। আর এই চমকের অভিঘাত পড়েছে বীরভূম জেলায়।
বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদটাই তুলে দেওয়া হলো। যে পদে দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত স্নেহভাজন অনুব্রত মণ্ডল। এমনকি জেলবন্দী অবস্থায় থাকলেও কেষ্টকে পদ থেকে সরানো হয় নি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ফের একবার জেলা সভাপতি হিসাবেই নিজের গড় গুছিয়ে নিচ্ছিলেন অনুব্রত। তবে দলের নতুন রদবদলে পদ হারাতে হলো কেষ্ট মন্ডল কে। শুধু পদ হারানোই নয়, জেলায় অনুব্রত মণ্ডলের অন্যতম বিরোধী কাজল সেখের সঙ্গে এক আসনেই থাকতে হবে তাঁকে। নতুন যে বিন্যাস দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তাতে বীরভূম জেলার চেয়ারপারসন করা হয়েছে বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় কে। জেলা সভাপতি পদ তুলে দিয়ে ৯ সদস্যের একটা কোর কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এই কোর কমিটিতে অনুব্রত মণ্ডলের পাশাপাশি রাখা হয়েছে অভিজিৎ সিনহা, আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিকাশ রায় চৌধুরী, চন্দ্রনাথ সিনহা, কাজল সেখ ও সুদীপ্ত ঘোষ। এছাড়া জেলার দুই সাংসদ অসিত মাল ও শতাব্দী রায় ও থাকছেন কোর কমিটিতে। বলাই বাহুল্য, জেলা সভাপতি হিসাবে কেষ্ট মন্ডল এতদিন যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারি ছিলেন, এবার আর সেটা করতে পারবেন না। কোর কমিটির সিদ্ধান্তই সবাইকে মেনে চলতে হবে। যদিও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেও জানিয়েছেন যে বীরভূম জেলা তিনি নিজে দেখবেন।
এদিকে বীরভূমের মতো উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলাতেও সভাপতি পদ তুলে দিলো শাসক দল। এতদিনের সভাপতি পদে থাকা সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কে জেলার চেয়ারপারসন রেখে এখানেও তৈরি করা হলো একটি কোর কমিটি, যে কমিটিতে নাম রয়েছে ডঃ শশী পাঁজা, অতীন ঘোষ, জীবন সাহা, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, সুপ্তি পান্ডে, স্বপন সমাদ্দার, স্বর্ণ কমল সাহা ও বিবেক গুপ্তা। তাৎপর্যপূর্ণ হলো এই কমিটিতে উত্তর কলকাতার তৃণমূল কংগ্রেসের সব বিধায়ককেই রাখা হয়েছে, পাশাপাশি কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কাউন্সিলরকেও তালিকায় ঠাঁই দেওয়া হয়েছে।