ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের আবহে বিশ্বের অনেক দেশই যখন নিরপেক্ষ থেকেছে তখন তুরস্ক প্রকাশ্যেই পাশে থেকেছে পাকিস্তানের। দুই দেশের বন্ধুত্বও নতুন কিছু নয়। তবে এই আবহে প্রশ্ন উঠছে এই বন্ধুত্বের আড়ালে লুকিয়ে কোন সমীকরণ?
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিক: ভারতের দিকে থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল পাকিস্তান তুরস্ক ড্রোন ব্যবহার করছে। তখন থেকেই দুই দেশের বন্ধুত্ব ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে৷ আসলে ইসলামিক বিশ্বের নেতা হওয়ার লড়াই চলছে বলেই কি তুরস্ক পাকিস্তানের পাশে নাকি এর মধ্যে আছে আলাদা কোন কারণ?
সৌদি আরব মনে করছে তুরস্ক এবং পাকিস্তানের সম্পর্ক শুধু কুটনৈতিক নয় বরং আদর্শগত দিক থেকেও তারা ভীষণ কাছাকাছি। আমেরিকারও বেশ ঘনিষ্ঠ দুই দেশ। আবার পাকিস্তানের সেনার অনেক আধিকারিকের সঙ্গেই তুরস্কের একাধিক উচ্চপদস্থ ব্যক্তির বেশ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক। তাই পাকিস্তান যখন রীতিমতো বেসামাল তখন বন্ধু যে পাশে থাকবে তা একপ্রকার নিশ্চিত ছিল। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরডোগান ভাবেন, তিনি একজন যথাযথ ইসলাম নেতা। তুরস্কই পারে গোটা বিশ্বের ইসলামিক দেশগুলির যোগ্য নেতা হতে তাই হয়তো নিজের অধিকার কায়েম করার এই ঠান্ডা লড়াইয়ে জয়ের জন্য, তিনি কাশ্মীর প্রসঙ্গে বারবার সমর্থন করেছেন পাকিস্তানকেই। ধর্ম যেন এই দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরও প্রকট করেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় শুধু আদর্শ গত কারণে এই বন্ধুত্ব কতদিন থাকবে। তুরস্কের কি কোন স্বার্থ নেই? আছে তো। শোনা যায় পাকিস্তানের সামরিক বাজার পুরোটাই দখল করতে চায় তুরস্ক।
আসলে গোটা বিশ্বে ইসলামিক দেশগুলোর নেতৃত্ব বরাবরই দিয়েছে সৌদি আরব, সেই জায়গা দখল করার ইচ্ছে তুরস্কের অনেকদিনই, কিন্তু সৌদি আরবের বাধার মুখে তা এখনও অবধি সম্ভবপর হয়নি। সৌদি আরবের কাছে আছে ইসলামি সহযোগী সংস্থার সমর্থন আর দুটি মসজিদ। অন্যদিকে তুরস্কের আছে অটোমান সাম্রাজের আভিজাত্য। ২০১৯ সালে এরডোগানের উদ্যোগে পাকিস্তান মালয়েশিয়া ইরানকে নিয়ে এক সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও সৌদির চাপে পাকিস্তান সেই সম্মেলন থেকে সরতে বাধ্য হয়। যে ঘটনা স্পষ্ট করে দেয় ইসলামিক দেশের নেতা হওয়ার লড়াইয়ে তুরস্কের ঠিক কতটা দরকার পাকিস্তানকে! আবার পাকিস্তানও তো কোন সাধু নয় তাই সে তুরস্কেরও পাশে থাকে আবার সৌদির সঙ্গেও কুটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে। উল্লেখ্য পাকিস্তানই একমাত্র ইসলামিক দেশ যে নাকি পারমাণবিক শক্তিশালী।
পাকিস্তান তুরস্কের সম্পর্ক কিন্তু বহুপুরনো। ধর্ম দিয়ে যা আরও মজবুত হচ্ছে। ড্রোন থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষার দিকে তুরস্ক আগলে রাখে পাকিস্তানকে। ভারত সৌদি সম্পর্কও নেহাত খারাপ নয়। কাশ্মীর ইস্যুতে ওয়াইসি যখন কিছুটা নীরব নিরপেক্ষ থাকে তখন তুরস্ক প্রকাশ্যে সমর্থন করে পাকিস্তানকে। ইসলামি সংহতির ক্ষেত্রে তুরস্ক সবসময় পাকিস্তানের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এর আড়ালেও তো গল্প আছে, কারণ পাকিস্তানই একমাত্র যারা আর্মেনিয়াকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়নি বদলে তুরস্ক কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে সমর্থন করে। গিভ এন্ড টেক নীতির ওপর দাঁড়িয়ে যে বন্ধুত্ব তার স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।