সকাল থেকেই খাবারের জন্য কাঁদছিলো ছোট্ট বাচ্চাটি। এদিকে বাড়িতে নেই একটা কানাকড়িও। দেড় বছরের সন্তানের মুখে একটু দুধ তুলে দিতে না পেরে, তাকেই তিস্তায় ছুঁড়ে ফেললেন অসহায় মা। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ময়নাগুড়ির মরিচ বাড়ি এলাকার।
সুপ্রিয় বসাক, জলপাইগুড়ি– জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ব্লকের তিস্তা সেতু সংলগ্ন মরিচবাড়ির বাসিন্দা সীমা বাওয়ালি ও বিপুল বাওয়ালি। ঠিকা কাঠ মিস্ত্রীর কাজ করা বিপুল বাওয়ালির তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান ও দেড় বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। এদিন এই দেড় বছরের পুত্র সন্তানকেই ভরা তিস্তায় ছুঁড়ে ফেলেন বিপুলের স্ত্রী সীমা। যে সময় সীমা তার শিশু সন্তানকে তিস্তায় ছুঁড়ে ফেলেন, সেই সময় নদীর পাড়ে উপস্থিত থাকা দুই কিশোরী ও এক মহিলা ওই ভরা তিস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়ে শিশু সন্তানটিকে উদ্ধার করেন। আশেপাশের লোকজনও ছুটে আসেন। সেই সময় সীমা ফের একবার ওই বাচ্চাটিকে জলে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপরেই জানা যায় খিদের চোটে কাঁদতে থাকা ছেলের কান্নার আওয়াজ আর সহ্য করতে পারছিলেন না সীমা।
ঘটনার সূত্রপাত এদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই খিদের জ্বালায় কান্নাকাটি করতে থাকে ছোট্টো শিশুটি। যা নিয়ে অশান্তি শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। ঠিকা মিস্ত্রীর কাজ করা বিপুল সপ্তাহ দুয়েক ধরে কোনো কাজ পান নি। তাই হাতে টাকা পয়সা কিছুই নেই যে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেবেন। অশান্তির মধ্যেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান বিপুল। এদিকে ছোট্টো শিশুটির কান্না থামার লক্ষণ নেই। তাই হয়তো পেটের সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে না পাড়ার গ্লানিতেই বাড়ির পাশের তিস্তায় নিজের সন্তান কে ছুঁড়ে ফেলেন সীমা।
এই ঘটনার পর সীমা বলেন, “ঘরে খাবারের অভাব। বাচ্চার খাওয়ার দুধ নেই। সাহায্য করার মতো ও কেউ নেই। বাচ্চাকে ঠিকমত পালন করতে পারছিলাম না তাই নদীতে ফেলে দিতে চেয়েছিলাম।” খবর পেয়ে নদীর পাড়ে ছুটে আসেন বিপুল। তার বক্তব্য, “কাজের খোঁজে বাইরে বেরোনোর কিছুক্ষণ পরেই খবর পাই যে আমার স্ত্রী ছোট সন্তানকে নদীতে ফেলে দিয়েছে। তাই ছুটে এসেছি।” বিপুল আরো বলেন, “প্রতিদিন কাজ জোটেনা। কিছুদিন আগে কাজ করে যা পয়সা পেয়েছিলাম সেই টাকা দিয়ে চাল কিনেছিলাম। সেই চালও শেষ হয়ে গিয়েছে।”