বাবা-মায়ের সম্পত্তির অধিকার সকল সন্তানের, বিবাহিত মহিলাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। রায় কলকাতা হাইকোর্টের।
ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক- বক্রেশ্বর থার্মাল পাওয়ার তৈরীর জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। জমি অধিগ্রহণের সময় রাজ্য সরকার বিভিন্ন রকমের স্কিম তৈরি করেন জমি হারাদের জন্য। তেমনি একটি স্কিম জমি হারাদের কোন বেকার ছেলে মেয়ে থাকলে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করতে পারেন জমি হারার কোটায় চাকরি পাওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করার জন্য। সেই নির্দেশিকা মেনে মামলাকারি একজন বিবাহিতা কন্যা সন্তান হিসেবে জমিহারা কোটায় চাকরি পাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য তার নামটা যাতে নথিভূক্ত করা হয়,সেই আবেদন করেন। এক্ষেত্রে রাজ্যর শ্রম দপ্তর তাকে জানিয়েদেন যে, বিবাহিত মহিলারা সরকারি (এক্সজেমটেড কোটা) কোটায় চাকরি পাওয়ার যোগ্য নয়।
শ্রম দপ্তরের সেই মেমোকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। কিন্তু রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর কলকাতা হাইকোর্টের সেই নির্দেশকে মান্যতা না দিয়ে সেই মেমো ইস্যু করেন যেখানে বলা হয়েছে বিবাহিত মেয়েরা সুযোগ-সুবিধা পাবেন না, শুধুমাত্র ছেলে, অবিবাহিত মেয়েরা পাবে।
মামলার শুনানিতে মামলাকারীর পক্ষে আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী জানান যে মেমো ইস্যু করা হয়েছে তা আইনত অবৈধ। সরকার কোনভাবেই নারী-পুরুষ ভেদাভেদ করতে পারেনা। তাই মেমোটাকে বাতিল করা হোক এবং সরকারি কোটার সুযোগ দেওয়া হোক। কলকাতা হাইকোর্ট মেমোটি খারিজ করে দেন পাশাপাশি হাই কোর্ট এও জানায় যে সরকার কখনোই নারী পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদ করতে পারে না। বাবা মায়ের সম্পত্তির অধিকার সবার রয়েছে। এখানে ছেলে মেয়ে আলাদা করা যায় না। সিঙ্গেল বেঞ্চের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে দ্বারস্থার রাজ্য সরকার তবে ডিভিশন বেঞ্চ তাদের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। সিঙ্গেল বেঞ্চের সেই নির্দেশ সরকার কার্যকর না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিরুদ্ধে আধিকারির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়।
বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিনহার পর্যবেক্ষণ কেন রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল? রাজ্য সরকার কি চাইছে নারী-পুরুষদের মধ্যে ভেদাভেদ করতে? বাবা-মায়ের সম্পত্তির অংশীদার ছেলে মেয়ে উভয়ই। কেন এখানে নারী পুরুষ আলাদা করে ভাবছে সরকার? আগামী ১০ই জুলাই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিক আদালতের সশরীরে উপস্থিত থেকে জানাবে একজন জমিদাতা হিসাবে কেন ভেদাভেদ করা হচ্ছে বিবাহিত অবিবাহিত? কেন বিবাহিত মহিলা তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন? ডিপার্টমেন্ট অফ এমপ্লয়মেন্টের আধিকারিককে হাজিরা নির্দেশ দেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা।