আরজিকর এবং কসবা মিলে যাচ্ছে এক সুতোয়। শুধু কসবা কাণ্ডের নির্যাতিতা সামান্য ভাগ্যবতী যে তিনি অন্তত তাঁর প্রাণটুকু ফিরে পেয়েছেন কিন্তু তাঁর শরীর জুড়ে যে আঘাত, যে ভয়াবহতা তা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে আর জি করের নির্যাতিতার কথা।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ ঘটনার পর ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে মেডিক্যাল টেস্ট হয় নির্যাতিতার। তাঁকে যখন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিধ্বস্ত তো তিনি ছিলেনই এর পাশাপাশি তখনই তাঁর গলায় কামড়ের দাগ লক্ষ্য করেন চিকিৎসকরা। রিপোর্ট থেকে জানা গেছে ভয়াবহ অত্যাচারের শিকার হয়েছেন তিনি।
মেডিক্যাল টেস্টের রিপোর্ট থেকে জানা গেছে যে নির্যাতিতার গলায় কামড়ের দাগ মিলেছে। বুকে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। ভ্যাজাইনাল ইনজুরি অর্থাৎ গোপনাঙ্গেও রয়েছে ক্ষত। একাধিক জায়গায় কামড়ের দাগ দাঁতের দাগ গোটা শরীরের নানা অংশে আঘাতের চিহ্ন। নখের আঁচড় ও কালশিটের দাগ। এর পাশাপাশি হকি স্টিক দিয়েও তাঁকে মারা হয় বলে অভিযোগ। চিকিৎসকদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণেই উঠে এসেছে বলপূর্বক আঘাতের প্রমাণ, যার মধ্যে যৌনাঙ্গে গুরুতর আঘাতও রয়েছে। চিকিৎসকেরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই ধরনের ক্ষত ও আঘাতের ধরন যৌন হেনস্থা বা ধর্ষণের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
২৫ জুন এই ঘটনার পর নির্যাতিতা তরুণী কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এফআইআরে নাকি অভিযুক্তদের পুরো নাম লিখতে দেয়নি পুলিশ। অভিযোগ, নির্যাতিতার লেখার ওপর হোয়াইটনার চালানো হয়। তিন অভিযুক্তের নাম বলা হয়েছে – এম, পি, জে। নির্যাতিতার অভিযোগ ‘ইউনিয়ন রুমের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছিল এম এবং পি। সেই সময় ‘জে’ তাঁকে ওয়াশরুমের দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল।’ ‘জে’ নাকি সেই ছাত্রীকে বলেছিল তাকে বিয়ে করতে। তাহলে নাকি টিএমসিপির পদ দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেই অভিযুক্ত। এই ‘জে’ হল কলেজের অস্থায়ী কর্মী তথা কলেজেরই প্রাক্তনী। এদিকে নির্যাতিতা সেই প্রস্তাব খারিজ করার পরই শুরু হয় অত্যাচার।
ওই তরুণী জানিয়েছেন, বাধা দিলে প্রেমিককে খুন করে দেওয়া হবে এবং বাবা-মাকে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয় মনোজিৎ। এছাড়াও জোর করে তাঁকে বিবস্ত্র করার সেই ভিডিও এবং ধর্ষণের ভিডিও রেকর্ড করে বাকি দুই ছাত্র। ওই রেকর্ডিং ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখানো হয় নির্যাতিতাকে। বাধা দেওয়ায় আঘাত করা হয়। এমনকী হকি স্টিক দিয়ে মারার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগে জানিয়েছিলেন নির্যাতিতা। তাঁর মেডিক্যাল টেস্টেও উঠে এসেছে গোটা শরীরে সেই নৃশংস নির্যাতনের একাধিক চিহ্ন।