মৃত্যু মিলিয়ে দিয়েছে আকাশ এবং মাটিকে। এয়ার ইন্ডিয়ার অভিশপ্ত বিমানটি বিজে মেডিক্যাল কলেজের ওপর যেভাবে ভেঙে পড়েছে তার জেরে ওই এলাকা এখন পরিণত হয়েছে কার্যত নরকে। যত্রতত্র ছড়িয়ে বিমানের পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ। এখনও আটকে থাকতে দেখা যাচ্ছে দেহাংশ। এই দুর্ঘটনায় মেডিক্যাল কলেজের অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই আবহে আপাতত পরীক্ষা স্থগিত করল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ এই মুহূর্তে চারদিকে শুধুই ধ্বংস চিহ্ন। এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিমানের বিভিন্ন অংশের টুকরো। বিভিন্ন জায়গায় জমা হয়েছে ভাঙা ইট-সিমেন্টের কালো স্তূপ। তার মধ্যে মিশে রয়েছে যাত্রীদের পোড়া দেহাংশও। ধ্বংসস্তূপে এখনও দেহ আটকে রয়েছে বলেই অনুমান উদ্ধারকারী দলের।
দুর্ঘটনাগ্রস্থ বিমানটি ঘটনার সময় বি জে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে গিয়ে ধাক্কা মারে। ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র বিস্ফোরণ হয় বিমানটিতে। সেই মুহূর্তে এলাকার তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ১০০০ জিগ্রি সেলসিয়াসে, ব্যাপক ক্ষতি হয় বিল্ডিংটির। বেশ কয়েকজন ডাক্তারি পড়ুয়া গুরুতর ভাবে আহত হন। মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজন পড়ুয়ার। একদিকে ভবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং পড়ূয়াদের এহেন অবস্থায় কোনভাবেই পরীক্ষা নিতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। তাই বি জে মেডিক্যাল কলেজের সমস্ত অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা আপাতত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পড়ুয়ারা সুস্থ হয়ে ওঠার পরে এই পরীক্ষাগুলি নেওয়ার ব্যবস্তা করা হবে। এত বড় এক দুর্ঘটনার বড়সড় প্রভাব পড়বে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেও, তাই সেই অবস্থার কথা চিন্তা করে এবং হস্টেল ভবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর আপাতত পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কবে নাগাদ এই উদ্ধারকাজ শেষ হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিমান ভেঙে পড়ার পর যাত্রীদের দেহ এমনভাবে দগ্ধ হয়েছে যে চেনার উপায় নেই। এমনকী অনেকের দেহ থেকে হাত-পা আলাদাও হয়ে গিয়েছে। উদ্ধারকাজের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুর প্রশাসনের দাবি, তারা মোট ৩১৯টি দেহাংশ সরকারি হাসপাতালের হাতে তুলে দিয়েছে। এক্ষেত্রে একই ব্যক্তির বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দেহের অংশ থাকার সম্ভাবনাই বেশি। কফিনবন্দী আটটি দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আসতে সময় লাগবে ৭২ ঘন্টা। কেন এত দেরি হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে এর পাশাপাশি হাসপাতালের ব্যবস্থা নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন মৃতদের পরিবার। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মৃতদের আত্মীয়র থেকে নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে গান্ধীনগরের গবেষণাগারে। সেখান থেকে ৭২ ঘণ্টা পরে রিপোর্ট এসে পৌঁছবে বিজে হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে। সেখান থেকে তা পৌঁছবে সিভিল হাসপাতালের কাসৌটি ভবনে। সেখান থেকে একে একে ফোন করে জানানো হবে মৃতের আত্মীয়দের।