বাবাকে কথা দিয়েছিলেন দুজন মিলে আর কিছুদিনের মধ্যেই একসঙ্গে থাকবেন। বলেছিলেন লন্ডন পৌঁছে বাবাকে কল করবেন। সেই কল আর আসেনি। গত বৃহস্পতিবার বিমান দুর্ঘটনায় পুড়ে খাক হয়ে যান পাইলট সুমিত সাভরওয়াল। মঙ্গলবার কফিনে চড়ে শেষবার বাড়ি ফিরলেন তিনি।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ বছর দুয়েক আগে মাকে হারিয়েছেন। নিজের বিয়ে করেননি। জীবনে পিছুটান বলতে কেবল ছিলেন অশীতিপর বাবা। বাবাকে কথা দিয়েছিলেন আর অল্প কিছুদিন, তারপর থেকে বাবার সঙ্গেই থাকবেন। কিন্তু বাবাকে কথা দিয়েও আর সেইকথা রাখা হল না অভিশপ্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমানের পাইলট সুমিত সভরওয়ালের। মঙ্গলবার একমাত্র সন্তানকে এই শেষ শয্যায় দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অশীতিপর বাবা।
মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই সুমিত জানিয়েছিলেন চাকরি ছেড়ে দেবেন। সুমিতের বাবার বয়স ৮২ বছর। তাঁর দেখভাল করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিতেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সেবাযত্ন করার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন সুমিত। এদিন সকালেই শেষবার বাড়ি ফেরেন সুমিত।বাকিদের মত সুমিতেরও দেহ প্রায় নেই। এসেছে কিছু দেহাংশ। এদিন সেই দেহাংশের সামনে দাঁড়ালেন সুমিত সভরওয়ালের বাবা। যে বিমান প্রাণ নিল সুমিতের মঙ্গলবার আহমেদাবাদ থেকে মুম্বইয়ে শেষবারের জন্য বিমানে করেই এল সুমিতের দেহাংশ। সেটুকুর জন্যই অপেক্ষা করছিলেন সুমিতের বাবা পুষ্করাজ সভরওয়াল ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। ছেলের পরিণতি দেখে হাউহাউ করে কাঁদলেন তিনি।
বাড়ির উঠোনে রাখা হয় এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের পাইলট সুমিত সভরওয়ালের দেহ। বাড়িতে তখন আত্মীয়, পড়শিদের ভিড়। কেউ এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না, পাড়ার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ সুমিত আর নেই। ভিড়ের মাঝখান থেকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন সুমিতের অশীতিপর বৃদ্ধ বাবা। তাঁকে এক জন ধরে নিয়ে এলেন কফিনের সামনে। অস্ফুটে যেন কিছু বললেন তার পর কান্নায় ভেঙে পড়লেন। আশেপাশের সকলেই তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেন তবে পুত্রহারা পিতার কান্না দেখে পড়শিরাও নিজেদের কান্না আর ধরে রাখতে পারলেন না। এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘এ দৃশ্য দেখা যায় না। এই বয়সে এসে ছেলের মৃত্যু দেখতে হচ্ছে বাবাকে!’’
একাই ৮,২০০ ঘণ্টা বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল ক্যাপ্টেন সুমিত সভরওয়ালের। আমেদাবাদ থেকে লন্ডনের এই রাস্তা হয়ত তাঁর কাছে কিছুই ছিল না। কিন্ত ভাগ্যের পরিহাস কিংবা যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্য কোন কারণের সামনে নতিস্বীকার করতেই হল এত অভিজ্ঞ এক পাইলটকে। ঘটনার সময় এটিসিকে মে ডে কল করে জানিয়েছিলেন নো থ্রাস্ট নো লিফট, যতক্ষণে এটিসির থেকে উত্তর এসেছে তিনি অগ্নিকুন্ডে মিশে গেছেন, খাক হয়ে গেছেন আর হয়ত ঠিক সেই মুহূর্তেই তাঁর বাবা অপেক্ষা করছেন ছেলের ফোনের। ছেলে তো তাঁকে জানিয়েছিল লন্ডন পৌঁছে ফোন করবে। ফোন এসেছিল তবে ছেলের নয়, কোন এক ফোন সুমিতের বাবাকে জানান দিয়েছিল ছেলে আর ফিরবে না। মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই বাবা ছেলের একসঙ্গে থাকার স্বপ্নটাও মরে গিয়েছিল।