এই ব্রিজ নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের ফল, তাতে একেবারেই সায় নেই কংগ্রেসের। কংগ্রেস নেতা উচিত রাজের মন্তব্য, ‘‘চেনাব ব্রিজ উদ্বোধনে কংগ্রেসকে ধন্যবাদ না দিয়ে মানসিকভাবে বেইমানি করেছেন মোদী। কংগ্রেসের আমলেই এই ব্রিজ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।’’
মাম্পি রায়, সাংবাদিক- ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলায় বেছে বেছে হিন্দু নিধন। ২৬ জনের মৃত্যুর বদলা নিতে ৭মের রাতে অপারেশন সিঁদুরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি। ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পর জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটনে দারুন গতি আসে। যে কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার কথা ভেবেও মানুষ পিছিয়ে যেতেন, সেই কাশ্মীরের অর্থনীতিতে একটা বড় জায়গা করে নেয় পর্যটন। কিন্তু ২২ এপ্রিলের পর আবারও ভূস্বর্গের কথা ভাবলেই জঙ্গি হামলার ভয় গেঁথে যায় মানুষের মনে। এবার সেই ভয়কে দূরে সরিয়ে দিতে এবার নিজে কাশ্মীরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর এই প্রথম কাশ্মীর সফর তাঁর।
চন্দ্রভাগা নদীর উপরে তৈরি ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু’ অঞ্জী ব্রিজের উদ্বোধন করলেন তিনি। উপত্যকায় নতুন দু’টি বন্দে ভারত ট্রেনেরও সূচনাও করেন। এই রেলসেতু কাশ্মীরের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগাযোগ আরও দৃঢ় করবে। কাটরা থেকে শ্রীনগর এবং কাশ্মীর থেকে কাটরা রুটের ট্রেন চলবে বন্দে ভারত।
কাটরা থেকে এই প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। জম্মুতে বিশ্বের উচ্চতম রেল সেতুর উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, “বৈষ্ণোদেবীর আশীর্বাদে ভারতের রেল নেটওয়ার্কে জুড়ে গেল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। এই রেলপথ কাশ্মীরের উন্নয়নকে নতুন গতি প্রদান করবে। জম্মু-কাশ্মীরের লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হল। জম্মু-কাশ্মীরের অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে চেনাব এবং অঞ্জি ব্রিজ। কাশ্মীরের পর্যটনের পাশাপাশি অর্থনীতিও নতুন মাত্রা পাবে। এবার অনায়াসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে কাশ্মীরের আপেল এবং কাশ্মীরের শাল।“ কাশ্মীর সফরে নিয়ে পহেলগাঁও হামলার পিছনে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “পাকিস্তান মানবতা আর কাশ্মীরিয়ত দুটোর উপরেই আঘাত করেছে। দেশে দাঙ্গা বাঁধানোটাই উদ্দেশ্য ছিল তাদের। কিন্তু গোটা বিশ্বের সন্ত্রাসীদের কড়া বার্তা দিয়েছে কাশ্মীরবাসী। কাশ্মীরের মানুষ এখন সন্ত্রাসকে যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত। কাশ্মীরের মেহনতি মানুষের রোজগার রুখে দেওয়াটাই উদ্দেশ্য ছিল ওদের। যে পর্যটনের উপর ভর করে কাশ্মীরবাসীর সংসার চলছিল, তাতেই আঘাত করতে চেয়েছিল পাকিস্তান। ঘোড়াওয়ালা থেকে ছোট ব্যবসায়ী, সকলকেই টার্গেট করেছিল পাকিস্তান। খেটে খাওয়া মানুষজনের মধ্যে অন্যতম আদিলও জঙ্গিদের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। “চন্দ্রভাগা বা চেনাব রেলসেতুর দৈর্ঘ্য ১.৩ কিলোমিটার। এই সেতু তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৪০০ কোটি টাকা। চন্দ্রভাগা নদী থেকে এই সেতুর উচ্চতা ৩৫৯ মিটার । ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন ছুটতে পারবে এই সেতুর উপর দিয়ে। রিখটার স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্পও টলাতে পারবে না এই ব্রিজকে। সেতুটি অন্তত ১২০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে বলেও দাবি করা হচ্ছে নির্মাতাদের তরফে। এই রেলওয়ে আর্চ ব্রিজটির বিশেষত্ব হল এর উচ্চতা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের চেয়ে ৩৫ মিটার বেশি।
তবে এই ব্রিজ নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের ফল, তাতে একেবারেই সায় নেই কংগ্রেসের। কংগ্রেস নেতা উচিত রাজের মন্তব্য, ‘‘চেনাব ব্রিজ উদ্বোধনে কংগ্রেসকে ধন্যবাদ না দিয়ে মানসিকভাবে বেইমানি করেছেন মোদী। কংগ্রেসের আমলেই এই ব্রিজ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।’’
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই জানেন, ২২ এপ্রিল পহলগাঁওতে হামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত জঙ্গিরা এখনও ধরা পড়েনি। এই সন্ত্রাসবাদীরা ২০২৩-এর ডিসেম্বরে পুঞ্চ ও ২০২৪-এর অক্টোবরে গগনগীর ও গুলমার্গের সন্ত্রাসবাদী হামলার সঙ্গেও যুক্ত ছিল বলে রিপোর্ট মিলেছে।’’
বিরোধীরা যাই বলুন না কেন, অপারেশন সিঁদুরের পর জম্মু-কাশ্মীরে চেনাব ব্রিজ এবং বন্দে ভারতের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বার্তা দিয়েই দিলেন যে জঙ্গি হামলার পর একটুও দমে যায়নি সরকার। আবারও আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন। সন্ত্রাসবাদ নয়, পর্যটন সহ একাধিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দারা