কয়েক মাস আগের ঘটনা। ট্যাংরার এক বাড়ি থেকে তিনজনের রক্তাক্ত মৃত দেহ উদ্ধার এবং বাইপাসের ধারের এক এক্সিডেন্ট মিলে গিয়েছিল এক সুতোয়। বাড়িতে স্ত্রী সন্তানদের খুন করে দুই ভাই মিলে নিজেরা বেড়িয়ে পড়েছিলেন আত্মহত্যা করতে। সঙ্গে ছিল এক ভাইয়ের ছেলে। তাঁরা বেঁচে যান। এই মুহূর্তে দুই ভাই জেলে। নাবালক প্রতীপের ঠাই হয়েছে এক সরকারি হোমে। চার মাস পর এবার নতুন স্কুলে পা রাখল প্রতীপ দে।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ মা কাকিমা দিদি নেই। বাবা এবং কাকা থেকেও নেই। তাঁরা আছেন সংশোধনাগারে। এক লহমায় গোটা জীবনটাই বদলে গিয়েছে প্রতীপের। মা কাকিমারা আদর স্নেহ দিদির সঙ্গে খুনসুটি বাবা কাকার সাহচর্য আর পাওয়া হবে না এই জীবনে। আজ হোমে থাকলেও আগামীতে কি হবে জানা নেই। তাই নতুন স্কুলে গেলেও প্রতীপের ভবিষ্যৎ এখনও চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত।
শিশুকল্যাণ সমিতির সৌজন্যে কলকাতার একটি হোমই এখন প্রতীপের ঠিকানা। চার মাস আগেও ট্যাংরার অতল শূর রোডের ছবিটা ছিল অন্য রকম। দিদির সঙ্গে গাড়িতে চেপে স্কুলে যেত বছর চোদ্দোর প্রতীপ দে। ছিল ৬ জনের হাসিখুশি পরিবার। কিন্তু কোথা থেকে আজ কোথায় এসে পড়েছে এই কিশোর, সাময়িক কাউন্সেলিং করতে হয়েছে তাকে এখনও সেই ভয়াবহ ট্রমা থেকে সবটা বেরোতে পারেনি প্রতীপ। তবে এবার নতুন স্কুল নতুন বন্ধুবান্ধব হয়ত তাকে তার ভয়াবহ অতীত থেকে বার করতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
নতুন স্কুলে ক্লাস এইটে ভর্তি করানো হয়েছে প্রতীপকে। এর আগে সে ট্যাংরার একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়়ত। প্রতীপের সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষা চলাকালীনই ঘটেছিল সেই ঘটনা, যা এক লহমায় মোড় তার জীবনের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছিল। তার পর এই চার মাসে কলকাতার এই হোমই প্রতীপের ঘর। আগের স্কুল থেকে টিসি নিয়ে সদ্য নতুন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সে। খুব একটা কথা বলেনা প্রতীপ। সম্প্রতি গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পেও অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় তাকে। নতুন স্কুলে সমবয়সিদের সঙ্গে মেলামেশা কিশোরমনের মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল হবে বলেই মনে করছে শিশু কল্যাণ সমিতি।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ট্যাংরার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রতীপের মা রোমি দে, কাকিমা সুদেষ্ণা দে এবং খুড়তুতো দিদি প্রিয়ম্বদার দেহ। অভিযোগ, তার কাকা প্রসূন তিন জনকে খুন করে তিনটি দেহ বাড়িতে রেখে প্রতীপ ও তার বাবা প্রণয়কে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন প্রসূন। ভোরে তাঁদের গাড়ি বাইপাসের ধারে মেট্রোর স্তম্ভে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনায় তিন জনই গুরুতর জখম হন। দীর্ঘ দিন হাসপাতালে ছিলেন তাঁরা। সুস্থ হয়ে ওঠার পরে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় প্রসূন-প্রণয়কে। মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল প্রতীপকেও কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতেই তিনজনে একসঙ্গে বেড়িয়েছিলেন।