আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশ। এরমধ্যে বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকার জন্য নতুন নির্দেশিকা পাঠালো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (Airport Authority of India)। নতুন করে বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে আরো কড়া বিধিনিষেধ এর কথা বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- গত সপ্তাহে আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনা নড়িয়ে দিয়েছে দেশের ভিত। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় শুধু যে বিমানের সওয়ারি ২৪১ জন মারা গিয়েছেন তা নয়, বিমানটি যে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভেঙে পড়ে, তাতে স্থানীয় জে বি মেডিকেল কলেজ হস্টেলের কুড়ি জনের বেশি ডাক্তারি পড়ুয়া মারা যান। এই ঘটনার পর অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক বিমান বন্দর সংলগ্ন এলাকার বিষয়ে নতুন করে ভাবনা চিন্তা শুরু করে। তার ফসল বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের এই নতুন চিঠি।
সূত্রের খবর, বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কলকাতা বিমান বন্দর সংলগ্ন সব কটি পুরসভা কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে এখন থেকে বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে কুড়ি কিঃমিঃ এলাকায় নতুন করে কোনো মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং তৈরির ক্ষেত্রে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমতি প্রয়োজন। আগে এই এলাকা ছিলো দশ কিলোমিটার। এখন সেটা বাড়ানো হলো। এরফলে বিধাননগর পৌর নিগম, উত্তর দমদম, মধ্যমগ্রাম ও নিউ ব্যারাকপুর পুরসভা এলাকার একটা বড় অংশ এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে। এমনকি কলকাতার ও কিছুটা অংশ এর আওতায় পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিধিনিষেধের ক্ষেত্রে ঠিক কি বলা হয়েছে ? পৌরসভা গুলি নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরির ছাড়পত্র দেওয়ার আগে এয়ারপোর্ট অথরিটিকে জানাতে হবে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরা সব খতিয়ে দেখে অনুমতি দিলে তবেই মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং তৈরি করা যাবে। এসব ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনেই ছাড়পত্র দেবে এয়ারপোর্ট অথরিটি।
এমনিতে বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় হাইরাইজ তৈরি করতে গেলে কিছু বিধিনিষেধ মানতে হয়। কলকাতা বিমানবন্দরের যে ফানেল এলাকা রয়েছে (আকাশপথে ১১ মিটার এলাকা, বিমান ওঠা বা নামার জন্য এলাকা) সেখানে দোতলার বেশি উচ্চতার বাড়ি নির্মান করাই যায় না। এই ফানেল এলাকার মধ্যে পড়ে মধ্যমগ্রাম পুরসভার ২৬, ২৭ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ড। এর পাশেই নিউ ব্যারাকপুরের ফতেশা খালের পাশে বহুতল নির্মানের ক্ষেত্রেও বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। আগে সর্বোচ্চ ৪৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বাড়ি তৈরিতে ছাড়পত্র দেওয়া হতো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই উচ্চতাতেও কাটছাঁট করা হতে পারে।
সূত্রের খবর, গত দুই একদিন এয়ারপোর্ট সংলগ্ন বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় সার্ভে করেছে এয়ারপোর্ট অথরিটি। তারপরেই এমন চিঠি পাঠানো হয়েছে। এয়ারপোর্ট অথরিটি সূত্রে খবর, অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক একটি নতুন রুলের খসরা ইস্যু করেছে যেখানে বলা হয়েছে অনুমোদিত উচ্চতার বাইরে সব নির্মাণ ভেঙে ফেলতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে কোনো দূর্ঘটনা না ঘটে, বা দূর্ঘটনা ঘটলে তার অভিঘাত যাতে বেশি না হয়, সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক।
এই বিষয়ে মধ্যমগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, “যারা NOC নিয়ে বাড়ি তৈরি করেছে, এখন তাদের বাড়ি ভেঙে দেওয়ার কথা বললে কি করে হবে ?” রথীন ঘোষের পাশাপাশি বিধাননগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু ও বলেন, “একটা বসতি হয়ে গেলে, সেটা আগে দেখে নি কেন? এটা তো এয়ারপোর্ট অথরিটির দেখার কথা ছিলো। তখন দেখেনি, এখন দুম করে একটা অর্ডার পাঠালে হবে ?” তবে দুজনেই মানছেন যে বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকার নিরপত্তার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ। এক্ষেত্রে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ গ্রহণযোগ্য যে কোনো প্রস্তাব দিলে তাঁরা সেটা অবশ্যই ভেবে দেখবেন। পাশাপাশি নতুন মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং বা বহুতল নির্মানের ক্ষেত্রেও যে বিধিনিষেধ করছে সেটাও তারা মেনে চলার পক্ষেই মত দিচ্ছেন।