ওয়াকফ বিল পাশ হওয়ার পর দেশ জুড়ে কম ঝড় ওঠেনি, ব্যাপক উত্তপ্ত হয়েছিল মুর্শিদাবাদ। কলকাতাতেও একাধিক মিছিল হয়েছে। এবার কি আবার সেই ঝড় উঠতে চলেছে? কারণ আবার ওয়াকফ সম্পত্তির দিকে বিশেষ নজরদারি শুরু করতে চলেছে কেন্দ্র। খোলা হচ্ছে বিশেষ এক পোর্টাল।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ মুসলিম সম্প্রদায়ের এই দেবত্তর সম্পত্তির ওপর কড়া নজরদারি চালাতে উদ্যোগী হল নরেন্দ্র মোদি সরকার। ওয়াকফ সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামুলক করার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। সে জন্য উমিদ নামে একটি পোর্টালও চালু করতে চলেছে কেন্দ্র। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। যারা এই বিলের বিরোধিতা করেছেন তীব্র ভাবে তারা এই বিষয়কে কিভাবে নেবেন? আগামী ৬ জুন উমিদ পোর্টালের উদ্বোধন হবে। এই পোর্টালের মাধ্যমে আগামী ৬ মাসের মধ্যে সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ করতে হবে। দিতে হবে সম্পত্তির বিবরণ, আয়তন, জিও ট্যাগ-সহ লোকেশন এবং অন্যান্য তথ্য।
প্রযুক্তিগত বা অন্য কোনও কারণে যে সব ওয়াকফ সম্পত্তি এই ৬ মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন হবে না, তাদের দেওয়া হবে এক থেকে দুই মাস বাড়তি সময় তবে তার পরেও যদি রেজিস্ট্রেশন না করা হয়, তাহলে সেই ওয়াকফ সম্পত্তিগুলোকে ডিসপুটেড বা বিতর্কিত সম্পত্তি বলে ঘোষণা করে দেওয়া হবে। পাঠিয়ে দেওয়া হবে ট্রাইব্যুনালে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া দেখভাল করবে প্রত্যেক রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ড। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ওয়াকফ আইন সংশোধিত হওয়ার পর দেশজুড়ে ওয়াকফ বোর্ডগুলির অধীনে থাকা জমির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১১৬ শতাংশ। ইতিমধ্যে শীর্ষ আদালতে এই তথ্য পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের আরও দাবি, বহু ক্ষেত্রে ওয়াকফ আইনের অপব্যবহার করা হয়েছে কেবলমাত্র ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তি দখল করার জন্য।
ওয়াকফ ইসলামি শরিয়তের একটি বিশেষ পরিভাষা। কোনও সম্পত্তির মালিক নিজের মালিকানা থেকে মুক্ত করে আল্লার সম্পত্তি ঘোষণা করে আল্লার উদ্দেশ্যে জনকল্যাণ বা জনসেবার জন্য উৎসর্গ করলে সেই উৎসর্গ করার কাজটিকে ‘ওয়াকফ’ বলা হয়।১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের মুসলমান ওয়াকফ বৈধকরণ আইনে প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, ওয়াকফ অর্থ কোনও মুসলমান কর্তৃক তার সম্পত্তির কোনও অংশ এমন কাজের জন্য স্থায়ীভাবে দান করা, যা মুসলিম আইনে ‘ধর্মীয়, পবিত্র বা সেবামূলক’ হিসেবে স্বীকৃত। এক কথায়, ওয়াকফ সম্পত্তি হল সেই সমস্ত স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি, যা দলিলের মাধ্যমে আল্লার নামে করে দেওয়া হয়। কোনও জনকল্যাণ মূলক কাজে ব্যবহৃত হয় এই জমি। অথবা কেউ উত্তরসূরী হিসেবে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। এই সম্পত্তি কখনও হস্তান্তর করা যায় না। সাধারণত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবর, মসজিদের জন্য, গরিব মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য জমি ব্যবহার করা হয়।