নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে মাছ ধরায় ছিল সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এই সময়টিকে মাছের প্রজননের জন্য ‘ব্রিডিং সিজন’ হিসেবে গণ্য করা হয়। অবশেষে ১৪ জুন মধ্যরাত পেরোতেই সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়, এবং ভোরের আলো ফোটার আগেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করে গভীর সমুদ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন মৎস্যজীবীরা।
বিশ্বজিৎ নস্কর, সাংবাদিক, দক্ষিণ ২৪ পরগনা- দীর্ঘ দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গভীর সমুদ্রে রুপোলি শস্যের খোঁজে পাড়ি দিতে চলেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার হাজার হাজার মৎস্যজীবী। ইলিশপ্রেমী বাঙালির রসনা তৃপ্তির আশায় এখন গোটা উপকূলবর্তী জেলাজুড়ে উৎসবের আবহ। কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, ক্যানিং ও গোসাবা– একাধিক মৎস্যবন্দরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে মাছ ধরায় ছিল সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এই সময়টিকে মাছের প্রজননের জন্য ‘ব্রিডিং সিজন’ হিসেবে গণ্য করা হয়। অবশেষে ১৪ জুন মধ্যরাত পেরোতেই সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়, এবং ভোরের আলো ফোটার আগেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করে গভীর সমুদ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। বন্দরে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। কেউ জাল প্রস্তুত করছেন, কেউ ট্রলার মেরামত করছেন, কেউ আবার খাবার, বরফ, জ্বালানির তেল মজুত করছেন ট্রলারে। লাইফ জ্যাকেট, লগবুক, জিপিএস ডিভাইস, বিপদ সংকেত যন্ত্র—সবকিছুই বাধ্যতামূলকভাবে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য দফতর। দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, এই বছর ইসরোর প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৎস্যজীবীরা জানতে পারবেন কোথায় বেশি মাছ রয়েছে, আবার বিপদের মুহূর্তে দ্রুত বার্তা পাঠানোও সম্ভব হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সমুদ্র উপকূলে এখন ৮৫০০-এর বেশি ট্রলার প্রস্তুত। প্রতিটি ট্রলারেই নজরদারির জন্য চলছে আধুনিক যন্ত্রের সংযোজন। পাশাপাশি, ভারতীয় নৌবাহিনী ও উপকূল রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না প্রশাসন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সহ-মৎস্য আধিকারিক (সামুদ্রিক) সুরজিৎ কুমার বাগ বলেন, “মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। ইলিশ ধরার সময় জালের ফাঁস হতে হবে কমপক্ষে ৯০ মিলিমিটার। ২৩ সেন্টিমিটারের নিচে আকারের মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমরা চাই, মৎস্যজীবীরা সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই মাছ ধরতে যান।” গত বছর গভীর সমুদ্র থেকে আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন বহু মৎস্যজীবী। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর প্রত্যাশা আরও বড়। মৎস্যজীবী সুকুমার দাস বলেন, “আবহাওয়া এখনও অনুকূলে নয়, তবে মা গঙ্গা মুখ তুলে তাকালে এবছর ভাল ইলিশ ধরা পড়বে আশা করছি।” ইলিশ ব্যবসায়ী বিকাশ চন্দ্র দাস জানান, “গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশের জোগান ভাল হবে বলেই মনে হচ্ছে। এখনও মরশুম পুরোপুরি শুরু হয়নি, তবে প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। আশা করছি, এ বছর সাধ্যের মধ্যেই বাঙালির পাতে ইলিশ পৌছবে।” সব মিলিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এখন জেগে উঠেছে ইলিশ-আশায়। সমুদ্রপাড়ের গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ। অপেক্ষা শুধু রুপোলি ফসল ঘরে তোলার।