উত্তর-পূর্বের রাজ্যটির বিভিন্ন প্রান্তে জল জমে থাকার কারণে ইতিমধ্যে ১১জনের মৃত্যু হয়েছে। আসাম বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বন্যা পরিস্থিতির জেরে ৬জনের মৃত্যু হয়েছে। ধসের কবলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৫জনের। আসামের ২২টি জেলায় প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর।
মাম্পি রায়, সাংবাদিক- কোথাও হাঁটুজল, কোথাও কোমর সমান। কোথাও আবার বুক অবধি জল জমেছে। এভাবেই কাটাচ্ছেন আসামের বাসিন্দারা। স্বাভাবিক জনজীবন সম্পূর্ণ ব্যাহত। ঘরের ভিতরে জল ঢুকেছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, খাবার নেই। ঘর ছেড়ে অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে হয়েছে। প্রশাসনের তরফে বোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে করেই আপাতত যাতায়াত করছেন বাসিন্দারা। উদ্ধারকাজে নেমেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।টানা বৃষ্টির জেরে ফুলে ফেঁপে উঠছে ব্রহ্মপুত্রের জল। এছাড়াও বিপদসীমার উপরে বইছে বারাক, সুবনসিরি সহ ১৫টি নদী। তার জেরে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে আসামে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যটির বিভিন্ন প্রান্তে জল জমে থাকার কারণে ইতিমধ্যে ১১জনের মৃত্যু হয়েছে।
আসাম বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বন্যা পরিস্থিতির জেরে ৬জনের মৃত্যু হয়েছে। ধসের কবলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৫জনের। আসামের ২২টি জেলায় প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর।দিনরাত এক করে উদ্ধারকাজ চলছে প্রশাসনের তরফে। অসম বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে খবর, বন্যা পরিস্থিতির জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রীভূমি, কাচার, নগাঁও জেলা। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১২হাজার ৬১০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে কৃষকরা। অন্তত ৯৪টি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। ১৬৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। ৩১হাজারের বেশি মানুষ সেই অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে লখিমপুরে ছুটে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।বন্যা পরিস্থিতির খবর নিতে আসাম, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী এবং মণিপুরের রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সমস্তরকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম ও ত্রিপুরা। আগামী এক সপ্তাহ টানা বৃষ্টি চলবে, অর্থাৎ এখনই রেহাই নেই, জানাচ্ছে মৌসম ভবন। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি উদ্ধারকাজে হাত লাগাচ্ছে সশস্ত্র সেনাবাহিনীর জওয়ানরাও। মণিপুরে উদ্ধারকাজের জন্য যৌথ অপারেশন চালাল ভারতীয় সেনা ও আসাম রাইফেলস।আগরতলায় বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনের পাশাপাশি অস্থায়ী ক্যাম্পে গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বললেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা।বৃষ্টি, বন্যা এবং ভূমিধসের জেরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৬টি রাজ্যে অন্তত ৩৬জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ৩৬ জনের মধ্যে অসমে ১১ জন, অরুণাচল প্রদেশে ১০ জন, মেঘালয় এবং মিজোরামে ৬ জন করে, ত্রিপুরায় ২ জন এবং নাগাল্যান্ডে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার অসম এবং অরুণাচল প্রদেশে আরও দুজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এর ফলে ২৯ মে থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ও বন্যার ঘটনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৬-এ দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৫ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অসংখ্য মানুষ ঘরছাড়া। কবে আবার ঘরে ফিরবেন, কবে আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন, সেই প্রশ্নই ঘুরছে দুর্গতদের মুখে মুখে।