কেউ হতে চাই ডাক্তার, কেউ বা ইঞ্জিনিয়ার আবার কেউ শিক্ষক। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করেও অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায় আর্থিক অভাব। আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের ৩৪জন মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের স্বপ্নপূরণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক
প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফল। ২ মে প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিকের ফল।এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেন ৯,৬৯,৪২৫ জন পরীক্ষার্থী। গতবারের তুলনায় ৫৬ হাজার ৮২৭ জন বেশি। পাশ করেছে ৯,১৩,৮৮১ জন। গত বছরের তুলনায় এই বছর পাশের হার বেশি। এবার পাশের হার ৮৬. ৫৬ শতাংশ। মাধ্যমিকের কয়েকদিন পরেই ৭ মে প্রকাশিত হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল। চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদনকারী ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ছিল ৪,৮২,৯৪৮ জন। পরীক্ষা দিয়েছে ৪,৭৩,৯১৯ জন। এরমধ্যে পাশ করেছে ৪,৩০,২৮৬জন। পাশের হার ৯০.৭৯ শতাংশ। পাশের হার এর মধ্যে ছেলেদের পাশের হার ৯২.৩% শতাংশ এবং মেয়েদের পাশের হার ৮৮.১২% শতাংশ। এবারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা ৪৭,৫৩৭বেশি।
চলতি বছর মাধ্যমিকে মেধাতালিকায় এক থেকে দশের মধ্যে স্থান পেয়েছে ৬৬ জন ছাত্র ও ছাত্রী রয়েছে। আর উচ্চমাধ্যমিকে মেধাতালিকায় দশের মধ্যে আছে ৭২ জন ছাত্রছাত্রী। প্রতিবছরই মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় স্থান গ্রহণ করতে না পারলেও এমন কিছু মেধাবী পরীক্ষার্থী থাকে যারা জীবনের একাধিক প্রতিকূলতাকে জয় করে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করে। হয়তো সেই ছাত্র বা ছাত্রীটি রাজ্যে কোনও জেলায় বসবাস করেন। বাড়ীর আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। বাবা -মা কোনও রকমে পড়াশোনা করিয়েছে তাঁদের সন্তানকে। এমনই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা, দিন আনা দিন খাওয়া ৩৪ জন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা মেধাবী পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াল কিডস্ সেন্টার নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বিগত আট বছর ধরে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের স্বপ্নের উড়ান বাস্তব রূপ দিতে তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সংস্থার সভাপতি বিশাখ কুমার ঘোষের বক্তব্য, “ভালো পড়াশোনা এবং ভালো মাকর্স পাওয়ার পর এমন অনেক ছাত্রছাত্রী থাকে যাদের পড়তে ইচ্ছে রয়েছে কিন্তু অর্থের অভাবে তারা চালিয়ে যেতে পারছে না। প্রতিবছর এমনই কিছু ছাত্রছাত্রীদের সামান্য সাহায্য করা হয়। এই উদ্যোগটার মূলে বলে রয়েছে তাদের উৎসাহ দেওয়া যাতে তারা পড়াশোনাটা বন্ধ না করে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের এইটুকু সাহায্য করায় আমাদের প্রচেষ্টা। “
আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন এই সব মেধাবী শিক্ষার্থীরা। তাঁদের স্বপন কেউ ডাক্তার হবে, কেউ বা ইঞ্জিনিয়ার হবে আবার কেউ শিক্ষক হবে। দুচোখে রয়েছে স্বপ্ন অনেক। কিন্তু তা ভেঙে যাওয়ার ভয়ও রয়েছে। মাথার মধ্যে একটা চিন্তায় ঘুরে বেড়াই আর্থিক অভাব স্বপ্ন ধ্বংস করে দেবে না তো। স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছেকে তরান্বিত করতে চলতি বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা ৩৪ জন পরীক্ষার্থীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল কিডস্ সেন্টার নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। মেধাবীদের পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয় এককালীন অনুদানও।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এমআইসি বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। উদ্যোক্তাদের এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন বৈশ্বানুর চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন,”আমরা আমাদের সীমিত শক্তি দিয়ে সব সময় এই ধরনের অনুষ্ঠানের পাশে থাকি এবং আগামী দিনেও থাকব।”
সামান্য হলেও এই সাহায্যে খুশি শিক্ষার্থীরা।সন্তান মেধাবী কিন্তু সংসারে আয় কম। দিন আনা দিন খাওয়া আয়ে কতটা সন্তানের ইচ্ছে পুরোন করতে পারবেন তা জানেনা এই মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বাবা- মায়েরা। তাই স্বেছাসেবী সংস্থার সাহায্যে তাঁরাও খুশি। এভাবেই ছোট ছোট প্রচেষ্টা স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে দিয়ে ভবিষ্যতে হাসি ফোঁটাবে এই মেধাবী শিক্ষার্থীদের মুখে।