রাশিয়ার ওপর এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আঘাত রবিবার করেছে ইউক্রেন যার ধাক্কা এখনও সামলাতে পারেনি পুতিনের দেশ। এই আবহেই ইস্তানবুলে শান্তি বৈঠকের আয়োজন হয়েছিল। মনে করা হচ্ছিল এবার কি বেরবে সমাধান সূত্র? কিন্তু জেলেনস্কি সাফ জানিয়ে দিলেন রাশিয়া হামলা যতক্ষণ না থামাবে ইউক্রেনও তাদের হামলা অব্যাহত রাখবে।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক টেবিলে আলোচনায় বসেছিলেন যুযুধান দুই দেশের প্রতিনিধিরা। ইস্তানবুলে দ্বিতীয় দফার শান্তি বৈঠকে যোগ দেন তাঁরা। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল — যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা। তবে সেই আলোচনায় রফাসূত্র বার হয় কি না, তা নিয়েও কৌতূহল ছিল বিশ্বের কূটনৈতিক মহলে। ওই বৈঠকে শুধু সেনাদের মৃতদেহ বিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে তা নয়, বন্দি বিনিময়েও সম্মত হয়েছে দুই দেশ। তবে যুদ্ধবিরতি কি হবে, তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে পারেনি তাঁরা। কারণ জেলেনস্কির সাফ কথা রাশিয়া হামলা না থামালে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাবে না।
প্রশ্ন উঠছেদ কেন ইউক্রেন একথা বলল? বৈঠকের মধ্যেই পূর্ব ইউরোপে আকাশপথে হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। রুশ সীমান্তবর্তী ক্রামাটরস্কে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ইলিনিভিকায় মৃত ২। ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলে মৃত্যু হয়েছে দুই মহিলার। ইউক্রেনের দাবি, প্রতি দিন ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। তাই এই হামলা বন্ধ না-হলে তারাও থামবে না। এই বিষয়ে আমেরিকার হস্তক্ষেপও চেয়েছেন জেলেনস্কি বলেন, “আমরা আমেরিকার কঠোর পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার মনে হয় ট্রাম্প রাশিয়ার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করাকে সমর্থন করবেন এবং যুদ্ধ থামাতে পুতিনকে বাধ্য করবেন।”
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র হিওরহি তিখভি ইউক্রেনীয় দূতাবাসের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট করা এক বার্তা অনুসারে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। তাঁর দাবি, এ দিনের আলোচনার সময়ে শিশুদের একটি লম্বা তালিকা রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল। ইউক্রেনের দাবি, শয়ে শয়ে শিশুকে জোর করে ইউক্রেন থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে রুশ বাহিনী। উল্টোদিকে মস্কোর দাবি, যুদ্ধের হাত থেকে ওই শিশুদের রক্ষা করার জন্যই তাঁদের ইউক্রেন থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি রুস্তেমের আরও দাবি, তাঁরা বিশ্বাস করেন,সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি দু’দেশের আলোচনার মধ্যে দিয়েই সমাধান সম্ভব। সূত্রের খবর, রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুই দেশই বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে। ২৫ বছরের কম বয়সি সমস্ত গুরুতর অসুস্থদের ছাড়া হবেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ১২০০০ সেনার মৃতদেহ বিনিময় করবে ইউক্রেন এবং রাশিয়া, শান্তি বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার শর্ত ছিল, তারা ইউক্রেনের যে এলাকাগুলি দখল করেছে, সেগুলি মস্কোর হাতে তুলে দেওয়া, ইউক্রেনের সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া রুশ ভাষাকে। স্বাভাবিক ভাবেই, ইউক্রেন এই দাবিগুলি খারিজ করে দেয়। তাই শান্তি বৈঠকে শান্তি খোঁজার যে চেষ্টা হয়েছিল তা যে সম্পূর্ণ সফল তা কিন্তু একেবারেই বলা যাচ্ছে না। অব্যাহতই থাকছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ।