জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের এই একাদশী এইবছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে পড়েছে আগামী শনিবার ৭ই জুন, ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ২৩শে জ্যৈষ্ঠ। এই দিনে যদি ভক্তিভরে বিশেষভাবে লক্ষ্মী-নারায়ণের পুজো করা যায়, তবে বিশেষ লাভ করা সম্ভব।
প্রবীর মুখার্জী, সাংবাদিক- হিন্দুধর্মে এমনিতেই একাদশীর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে বৈষ্ণবদের কাছে তো বটেই। প্রতিটি একাদশীরই আলাদা করে নাম রয়েছে। কামদা একাদশী,মোহিনী একাদশী, শয়নী একাদশী, মোক্ষদা একাদশী ইত্যাদি। এদের মধ্যে নির্জলা একদশী আবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় শাস্ত্র মতে, এই একাদশীর ব্রত করলে নাকি, বছরের বাকি ২৩টি একাদশীর সমান ফললাভ করা যায়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের এই একাদশী এইবছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে পড়েছে আগামী শনিবার ৭ই জুন, ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ২৩শে জ্যৈষ্ঠ। এই দিনে যদি ভক্তিভরে বিশেষভাবে লক্ষ্মী-নারায়ণের পুজো করা যায়, তবে বিশেষ লাভ করা সম্ভব। এখন প্রশ্ন হল, কীভাবে করবেন লক্ষ্মী-নারায়ণের এই পুজো !
শনিবার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে শুদ্ধাচারে পরিষ্কার জায়গায় গঙ্গার জল ছিটিয়ে হলুদ বস্ত্রের উপর লক্ষ্মী-নারায়ণের মূর্তি বা ছবি রাখুন। হলুদ রঙের ফুল বা সাদা ফুল দিয়ে ভক্তিভরে পুজো করুন। শ্বেতচন্দন দিয়ে তুলসী নিবেদন করবেন নারায়ণের শ্রীচরণে। লক্ষ্মী দেবীর চরণে কিন্তু তুলসী নিবেদন করবেন না। মন্ত্র না জানলেও কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু, জপ করতে ভুলবেন না।
নারায়ণের জপ করুন ঔঁ নমঃ নারায়ণায় নমঃ।
লক্ষ্মীদেবীর জপ করুন শ্রীঁ লক্ষ্মী দেবৈ নমঃ।
নারায়ণের গায়ত্রী মন্ত্র ঔঁ নারায়ণায় বিদ্মহে বাসুদেবায় ধীমহি তন্নো বিষ্ণু প্রচোদয়াৎ ঔঁ।
লক্ষ্মীদেবীর গায়ত্রী মন্ত্র মহালক্ষ্ম্যৈ বিদ্মহে মহা শ্রীয়ৈ ধীমহি তন্নো শ্রীঃ প্রচোদয়াৎ।
লক্ষ্মী-নারায়ণের মন্ত্র ঔঁ হ্রীং হ্রীং শ্রীঁ শ্রীঁ লক্ষ্মী-বাসুদেবায় নমঃ।
পুজোর পর একাদশীর মাহাত্ম্য পাঠ করতে পারেন। ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি করতে পারেন। ভোগে নানারকম মিষ্টি ও ফল নিবেদন করতে পারেন। কিন্তু, সেখানে অবশ্যই তুলসী পাতা ব্যবহার করবেন। মনে রাখবেন তুলসী ছাড়া কোনও কিছুই গ্রহণ করেন না নারায়ণ বা ভগবান বিষ্ণু। অন্যান্য দেব-দেবী এমন কি লক্ষ্মী দেবীর জন্য যা নিবেদন করবেন, সেখানে ফুল দেবেন। যেহেতু লক্ষ্মী-নারায়ণের একসঙ্গে পুজো করছেন, তাই ভোগ নিবেদনে শুধুমাত্র তুলসী পাতা দিলেই চলবে। ভোগ নিবেদনের পর হাত জোড় করে লক্ষ্মী-জনার্দনের সামনে প্রার্থনা করুন নমঃ ব্রহ্মণ্যদেবায়ঃ গোব্রহ্মণ্যহিতায়চঃ জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় বাসুদেবায় নমহস্তুতে। মন্ত্র হিনং , ক্রিয়া হিনং ভক্তি হিনং জনার্দনম যৎ পুজিতাং ময়াদেব পরিপূর্ণং তদস্তুমে।
পরদিন অর্থাৎ দ্বাদশী তিথিতে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে আরও একবার লক্ষ্মী-জনার্দনের ছবি বা মূর্তির সামনে প্রার্থনা করে তবেই উপবাস ভঙ্গ করবেন। মাঝের এই সময়ে শুধুমাত্র লক্ষ্মী-নারায়ণের প্রসাদই গ্রহণ করতে পারেন। অর্থাৎ ফল-মূল গ্রহণ করতে পারেন তবে তা লক্ষ্মী-নারায়ণকে নিবেদন করার পর। যদিও কিছু গ্রহণ না করলে সবচেয়ে ভালো ফল লাভ সম্ভব। কিন্তু, বর্তমান এই সময়ে সুগার বা প্রেসার বা হার্ট বা কিডনীর জটিল রোগের স্বীকার অনেকেই । তাই একেবারে নির্জলা থাকলে ওষুধ গ্রহণ করতে অসুবিধা হতে পারে। এই একাদশীকে অনেকে পান্ডবা একাদশীও বলে থাকেন। কেউ বা বলেন ভীমসেনী একাদশী তিথি।