তপশিলি জাতিভুক্ত ট্রেনি পাইলটকে অপমান করে বলা হয়— “তুমি প্লেন ওড়াতে পারো না, জুতো সেলাই করো” সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- এক তপশিলি জাতিভুক্ত ট্রেনি পাইলটের উপর জাতিগত অপমানের অভিযোগে বিপাকে পড়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিমান সংস্থা ইন্ডিগো। ৩৫ বছর বয়সী ওই পাইলট গুরুতর অভিযোগ এনেছেন, সংস্থার তিনজন সিনিয়র আধিকারিক তাঁকে পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন— “তুমি প্লেন ওড়ানোর যোগ্য নও, বরং জুতো সেলাই করো। এমনকি তুমি এখানে পাহারাদার হবারও যোগ্য নও।”
ওই পাইলট অভিযোগ জানিয়েছেন যে, গত ২৮শে এপ্রিল ইন্ডিগোর গুরুগ্রাম অফিসে এক ৩০ মিনিটের বৈঠকে এই অপমানজনক মন্তব্য করা হয়। তিনি বলেছেন, এই অপমানের পিছনে তাঁর জাতিগত পরিচয়ই মূল কারণ। এর পাশাপাশি তাঁকে পেশাগতভাবে হেনস্থা করাও হয়েছে— অকারণে বেতন কেটে নেওয়া হয়েছে, জোর করে পুনরায় ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয়েছে, ওয়ার্নিং লেটার দিয়ে মানসিক চাপে রাখা হয়েছে। এই সমস্ত অভিযোগ নিয়ে তিনি সংস্থার উচ্চ কর্তৃপক্ষ ও এথিকস কমিটির দ্বারস্থ হলেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি পুলিশের শরণাপন্ন হন।
এফআইআর তিন আধিকারিকের বিরুদ্ধে- বেঙ্গালুরু পুলিশে প্রথমে একটি ‘জিরো এফআইআর’ দায়ের করা হয়, যা পরে পাঠানো হয় গুরুগ্রামে, যেখানে ইন্ডিগোর সদর দফতর রয়েছে। গুরুগ্রাম পুলিশ SC/ST (Prevention of Atrocities) Act অনুযায়ী ইন্ডিগোর তিন আধিকারিক— তপস দে, মনীশ সাহনি ও ক্যাপ্টেন রাহুল পাটিলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এবিষয়ে ইন্ডিগো একটি বিবৃতিতে অভিযোগগুলোকে সম্পূর্ণ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। ইন্ডিগো বলেছে- “ইন্ডিগো সংস্থা বৈষম্য, হয়রানি বা পক্ষপাতের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলে। আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্থা এই অভিযোগকে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছে এবং তদন্তে পুলিশকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।” এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহলে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্পোরেট দুনিয়ার এই ধরনের ঘটনা ভারতের অন্তর্নিহিত জাতিগত বৈষম্যের চিত্রকেই সামনে আনছে। পুলিশ তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এখন গোটা দেশের নজর রয়েছে গুরুগ্রাম পুলিশের তদন্ত ও ভবিষ্যৎ আইনি পদক্ষেপের দিকে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে— আধুনিক ভারতের পেশাদার জগতে এখনও কি জাতপাতের বিষাক্ত ছায়া রয়ে গেছে? নাকি এই ঘটনা ব্যতিক্রম? উত্তর সময়ই দেবে।