একদিকে অনশন অন্যদিকে বিধানসভা অভিযান। চাকরি ফেরাতে মরিয়া চাকরিহারাদের সোমবার ছিল একাধিক কর্মসূচি। সরকারকে স্বসম্মানে চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে এই দাবিতে সরব চাকরিহারারা।
নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক
হকের চাকরি ফেরত চেয়ে অনশন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে অনশনে চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের ১০ জন। রবিবার সকাল থেকেই একের পর এক অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডল সহ আট জন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রবিবার অনশনকারী বলরাম বিশ্বাস গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বাকী অনশনকারীদের শরীর ধীরে ধীরে খারাপের পথে গেলেও তাঁরা অনশনে অনড় ছিলেন। তবে বেলা যত গড়াই অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থার ততই অবনতি হয়। রাতের মধ্যে সাতজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোমবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনশনকারী মিতা সরকার। ২০১৬ সালের প্যানেলভুক্ত হওয়ায় তিনিও চাকরি হারিয়েছেন। নিজের হকের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে মিতা সরকারও অনশনে সামিল হন। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, একজন অনশনকারী অসুস্থ হলে আরও একজন অনশনে বসবেন। কিন্তু দাবি না মেটা পর্যন্ত আমরণ অনশন চলবে এমনই জানান তাঁরা।
২২লক্ষ পরীক্ষার্থীর ওএমআর প্রকাশ করতে হবে, যোগ্য- অযোগ্যের তালিকাপ্রকাশ করতে হবে, নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সোমবার বিধানসভা অভিযানে সামিল হন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশ। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা মিছিল করে আসে। তারপর আন্দোলনকারীদের পাঁচ জন প্রতিনিধি বিধানসভায় গিয়ে তাঁদের ডেপুটেশন জমা দেন। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তাঁরা কোনও ভাবেই একই চাকরির জন্য বারবার পরীক্ষায় বসবেন না। তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। ”যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী অনশন মঞ্চ’-র অন্যতম মুখ সুমন বিশ্বাসের দাবি, স্কুল সার্ভিস কমিশন নতুন করে নিয়োগের যে গেজেট ও নোটিফিকেশন প্রকাশ করেছে তা বেআইনি । তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই বিজ্ঞপ্তি এবং গেজেট প্রত্যাহার-সহ ২২ লক্ষ ওএমআর শিট প্রকাশ করতে হবে।” এই দাবিকে কেন্দ্র করেই ”যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী অনশন মঞ্চ’-র তরফ থেকে বিধানসভা অভিযানের ডাক দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত সোমবার বিকেল পাঁচটার পর থেকে নতুন নিয়োগের জন্য খুলে যাচ্ছে আবেদনের পোর্টাল। ১৬ জুন সন্ধ্যা থেকে ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত নতুন নিয়োগ জন্য আবেদন করতে পারবেন আবেদনকারীরা। এসএসসি-র বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে লিখিত পরীক্ষা হতে পারে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ। লিখিত পরীক্ষার ফলপ্রকাশ সম্ভাব্য তারিখ অক্টোবরের চতুর্থ সপ্তাহে। ইন্টারভিউয়ের সম্ভাব্য সময় নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ। এবং প্যানেল প্রকাশিত হবে ২৪ নভেম্বর। কাউন্সেলিং এবং নিয়োগের প্রস্তাব সংক্রান্ত ঘোষণা হতে পারে ২৯ নভেম্বর। এই নিয়োগের পরীক্ষায় চাকরিহারাদের পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে একই চাকরির জন্য বারবার একই পরীক্ষায় বসতে নারাজ চাকরিহারারা। হকের চাকরি তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে অনশনের পথ বেছে নিয়েছেন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশ। শিক্ষা দফতরের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে বসেই অনশন চালাচ্ছেন তাঁরা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে অনড় চাকরিহারাদের একাংশ।