রথযাত্রা উপলক্ষে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎসবটি পালিত হয় ওড়িষার পুরীতে। তবে এই রাজ্যেও কিন্তু মহাধুমধামে পালিত হয় রথযাত্রা। বাংলাতেও সুপ্রাচীন রথযাত্রাগুলির মধ্যে অন্যতম শ্রীরামপুরের মাহেশের রথযাত্রা। সেই মাহেশেরই সংক্ষিপ্ত ইতিহাস রইল এই প্রতিবেদনে।
সাংবাদিক, প্রবীর মুখার্জী : তখন মুসলমান শাসন চলছে বাংলায়। প্রায় ৬৩০ বছর আগের কথা। ঋষি ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী পুরীতে গিয়েছিলেন তীর্থযাত্রায়। তাঁর ইচ্ছা হয়েছিল নিজের হাতে ভোগ রান্না করে জগন্নাথদেবকে নিবেদন করবেন। কিন্তু, মন্দির কর্তৃপক্ষ সেই অনুমতি না দেওয়ায় মনে ব্যথা পান ব্রহ্মচারী ধ্রবানন্দ। সেখানেই আমৃত্যু উপবাসের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। উপবাসের তৃতীয় দিনে স্বপ্নে ভগবানের আদেশ পান। ভগবানের সেই আদেশে বাংলায় ফিরে ভাগীরথীর তীরে, মাহেশে বিশাল দারু বৃক্ষের কান্ড অর্থাৎ নিম গাছের কান্ড খুঁজে পান। যা দিয়ে তৈরি করান জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রা দেবীর মূর্তি। তবে বিষয়টা কিন্তু, অত সহজে হয় নি। জগন্নাথ দেবের আদেশ মতো শ্রীরামপুরে ভাগীরথীর তীরে এসে কঠো তপস্যা শুরু করেন ব্রহ্মচারী ধ্রুবানন্দ। মারাত্মক বৃষ্টির একরাতে, সেই দারু-ব্রহ্ম মাহেশের কাছে আবর্ভুত হয়। জলে ঝাঁপিয়ে সেই ব্রহ্ম গ্ররণ করে শুরু হয় মূর্তি তৈরির কাজ। সেই মূর্তিই প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
এদিকে সন্ম্যাসধর্ম গ্রহণের পর নীলাচলের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন মহপ্রভু। পথে তিনি পৌঁছেছিলেন মহেশে। ধ্রুবানন্দ প্রতিষ্ঠিত এই জগবন্ধুর এই মন্দির পরিদর্শনের পর তিনি জ্ঞান হারান। শ্রীচৈতন্যই মাহেশের নামকরণ করেন। ‘নব নীলাচল’ বা ‘নতুন পুরী’। পরে ধ্রুবানন্দ এই মন্দিরের দায়িত্ব শ্রীচৈতন্যকে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তাঁর অনুরোধেই তাঁর ১২টি গোপালের মধ্যে পঞ্চম কমলাকর পিপলাইকে মন্দিরের সেবাইত করেন। এই ঘটনার কিছুদিন পর অপ্রকট হয় ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী।
এদিকে কমলাকর পিপলাই আবার শুধুমাত্র যে শ্রীচৈতন্যের ১২ গোপালের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন তা কিন্তু নয়। তিনি ছিলেন সুন্দরবনের খালিজুলির জমিদার-পুত্র। যুক্তিবিদ্যা নিয়ে জ্ঞান আহরণের জন্য এসেছিলেন নবদ্বীপে। পরে তিনি শ্রীচৈতন্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনিই ছিলেন ৬৪জন মোহন্তের মধ্যে প্রথম। মহেশের মন্দিরের সেবার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি, সেখানেই থেকে যান। তিনিই সূচনা করেছিলেন রথ উৎসবের। ১৩৯৬ সালে প্রথম রথযাত্রার সূচনা হয়েছিল।যা আজ বিখ্যাত মাশের রথ উৎসব নামে। তাঁর উত্তরাধিকারীরা এখনও মহেশে ও কলকাতায় মন্দিরের সেবাইতের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। রথেরও রয়েছে ইতহাস। পরের প্রতিবেদনে থাকবে মাহেশের রথ নিয়ে আলোচনা।