একদিন নিজে হাতে কিছু তৈরি করে ওই শিশুটিকে খাওয়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন কর্মা। শিশুটি তখন জানায়, যা মন চাইছে আমাকে দিতে পারো। কর্মা তখন খিচুড়ি রান্না করে ভগবানকে নিবেদন করলেন। পরে সেই প্রসাদ পরিবেশন করলেন শিশুটিকে।
প্রবীর মুখার্জী, সাংবাদিক : পোলাও অন্ন তো আছেই সে তো দুপুরের ভোজে । কিন্তু বাল্যভোগে রোজ নিয়ম করে চাই খিচুড়ি। না হলে জগন্নাথদেব অভুক্ত থাকবেন। এর পিছনে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনী। যে কাহিনী শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে. আবার মহপ্রভুর লীলার এই কাহিনী শুনে আপনিও হয়তো নতুন করে জগবন্ধুর প্রেমে পড়ে যাবেন। শুনুন তবে..
কর্মাবাই। প্রভুর খুব ভক্ত ছিলেন তিনি। থাকতেন শ্রীক্ষেত্রেই। অর্থাৎ ভগবানকে খুব ভালোবাসতেন। একেবারে সন্তানের মতো। প্রতিদিনি নিজে হাতে পুজো করে ফল মিষ্টি ভোগ হিসেবে নিবেদন করতেন। সেই সময়ে এক শিশু আসত কর্মার কুটীরে। সেও ওই ভগবানকে নিবেদন করার পর প্রসাদ গ্রহণ করে চলে যেত। কর্মাবাই রোজ ওই শিশুকে খেতে দিতেন। ফল মিষ্টি যা থাকত তাই দিয়েই অতিথি সৎকার করতেন কর্মা। একদিন নিজে হাতে কিছু তৈরি করে ওই শিশুটিকে খাওয়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন কর্মা। শিশুটি তখন জানায়, যা মন চাইছে আমাকে দিতে পারো। কর্মা তখন খিচুড়ি রান্না করে ভগবানকে নিবেদন করলেন। পরে সেই প্রসাদ পরিবেশন করলেন শিশুটিকে। শিশুটি যখন ওই খিচুড়ি গ্রহণ করছেন, তখন মুখে যাতে গরম ছ্যাঁকা না লাগে, তার জন্য হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে লাগলেন। শিশুটি পরম তৃপ্তিতে সেই খিচুড়ি গ্রহণ করে ছুটে চলে গেলেন। আর আর্জি জানিয়ে গেলেন খুব সুন্দর এই খিচুড়ি যেন কর্মা ফের তাকে করে দেন।
দিন চলতে লাগল। রোজই সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান না করেই কর্মাবাই খিচুড়ি রান্না করে দিতেন। না হলে যে সেই শিশুটির খাওয়া হবে না। শিশুটি খুব সকালে তার কুটীরে আসে। একদিন এক সাধু এলেন কর্মার কুটীরে। তিনি বাসি জামাকাপড়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করলেন। সেই সঙ্গে জানালেন স্নান না করে অন্নজাতীয় কিছু রান্না করা অপরাধ। অগত্যা কর্মাবাই পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে রান্নাঘরে গিয়ে খিচুড়ি রান্না করে তাঁর গৃহদেবতাকে ভোগ নিবেদন করলেন। এদিকে সময় যে বয়ে যাচ্ছে, দ্রুত ফিরতে হবে মন্দিরে। গরম সেই খিচুড়ি খেতে গিয়ে শিশুটির চোখে জল চলে এল। কোনওরকমে সেই খিচুড়ি খেয়েই দে ছুট।
কর্মার মনটা খুব খারাপ। তাঁর তৈরি খিচুড়ি খেতে গিয়ে শিশুটে কেঁদে ফেলেছে।এদিকে মন্দিরে দরজা খুলতেই পুরোহিত দেখতে পান জগন্নাথদেবের মুখে খিচুড়ি লেগে রয়েছে। ঠাকুর চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। কারণ জানতেই ঠাকুর স্বয়ং পুরোহিতকে জানালেন সেকথা। সাধুও নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলেন মহাপ্রভুর কাছে। সেই থেকেই জগন্নাথদেবের বাল্যভোগে প্রতিদিন খিচুড়ির চল। যা আজও হয়ে আসছে। স্বর্গীয় সেই স্বাদ গ্রহণের জন্য বহু দূর দূরান্ত থেকে ভক্তের ঢল নাম পুরীর শ্রীক্ষেত্রে।