স্কুলে শিক্ষাদানই মুল উদ্দেশ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের। তার সঙ্গে সঙ্গে সহবতের পাঠও দিয়ে থাকেন তাঁরা। কিন্তু এবার ছাত্রদের হাতে বই, খাতার বদলে ঘুড়ি, সুতো তুলে দিলেন শিক্ষকেরা। এটাও কি সহবতের পাঠ। বিষ্ণুপুরের স্কুলে কেন এমন ঘটলো। কি বলছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক!
মিলন কর্মকার, বাঁকুড়া– বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের ‘চৌকান সাঁওতাল প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এক অভিনব ঘটনার সাক্ষী থাকলো। ছাত্রদের বকা ঝকা করা নয়, পড়ার কথা বলা নয়, কোনো শাস্তি দেওয়া নয়, বরং ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য উৎসাহিত করলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। শুধু উৎসাহিত করাই নয়, এদিন একেবারে নিজের খরচে ঘুড়ি, সুতো-লাটাই কিনে স্কুলে হাজির হন প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু মুখার্জি। নিজের হাতেই প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রদের প্রত্যেকের হাতে সেগুলো তুলে দিলেন।
শিক্ষক, শিক্ষিকাদের থেকে হঠাৎ এই উপহার পেয়ে কিঞ্চিত হতবাক হয়ে পড়ে ছোট ছোট ছাত্ররা। অভিনব এই উপহার প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু মুখার্জি বলেন, “বাচ্ছাদের মোবাইল আসক্তি কমানোর জন্যই এমন উদ্যোগ নিয়েছি। এরা সারাদিন শুধু মোবাইলে গেম খেলে, রিলস্ বানায়। বাংলার চিরায়ত খেলাধুলা কি সেসব এরা প্রায় ভুলতে বসেছে। তাই এই ব্যবস্থা।”
আসলে বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুরের এইসব এলাকায় আজকের দিনে পালিত হয় দশহরা পুজো। রাঢ় বাংলায় জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে দশহরা ব্রত পালন করে মনসা পুজো করা হয়। পালিত হয় অরন্ধন দিবস। আর সেই সঙ্গে সারাদিন চলে ঘুড়ি ওড়ানো। কিন্তু বর্তমান যুগে ছাত্র ছাত্রীদের কাছে বই খাতার থেকেও যেন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে একটা মোবাইল ফোন। আর এই মোবাইলের চক্করে গ্রাম বাংলার সাধারণ খেলাধুলা থেকে শুরু করে অবসর যাপনের সব কিছুই যেন বিদায় নিচ্ছে। নিজের ছোটবেলার কথা মনে করে ও রাঢ় বঙ্গের, বিশেষ করে বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর এলাকায় এই দিনে ঘুড়ি ওড়ানোর পুরনো ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করেই প্রধান শিক্ষক তাই ছাত্রদের জন্য ঘুড়ি, লাটাইয়ের ব্যবস্থা করেছেন।