ইরানের ওপর মারাত্মক এয়ার স্ট্রাইক করেছে ইজরায়েল। ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রের ওপর আঘাত হেনেছে ইজরায়েল। প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি ইজরায়েলে। মধ্যপ্রাচ্যে এই যুদ্ধের দামামা যখন বেজে উঠেছে তার প্রভাব পড়ল বিশ্ববাজারে। এক ধাক্কায় হু হু করে বেড়ে গেল অপরিশোধিত তেলের দাম। ধস নামল শেয়ার বাজারেও।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ ইজরায়েল ইরানের এই ভয়াবহ হামলা চালানোর পরেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ব্যাপক ভাবে বেড়ে গিয়েছে যার জেরে তেলের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর সেই আশঙ্কায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে ৯ শতাংশেরও বেশি, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হলে তা মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটাবে বলেই অভিমত বিশ্লেষকদের। এই অঞ্চলের অপরিশোধিত তেল বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে তেলের দাম বৃদ্ধি শুধু পেট্রোল–ডিজেলের মূল্য নয়, খাদ্যসহ প্রতিদিনের নানা পণ্যের দামকেও প্রভাবিত করবে। ব্রেন্ট ক্রুড ও নিউ ইয়র্কের লাইট সুইট তেলের দাম ১০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
ইরান ইতিমধ্যেই ইজরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে কোন মুহূর্তে ইজরায়েলকে এর যোগ্য জবাব দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই ইজরায়েলের একাধিক জায়গায় ড্রোন হামলা শুরু করেছে ইরান। পরিকল্পনা চলছে আরও বড় প্রত্যাঘাতের। তাই প্রত্যাঘ্যাতে পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, সেক্ষেত্রে ইরান হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে তেল পরিবহনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই পথ দিয়েই বিশ্বের প্রায় এক–পঞ্চমাংশ অপরিশোধিত তেল সরবরাহ হয়। ইরান যদি এই রুটে হামলা চালায় বা নৌ–পরিবহন ব্যাহত করে, তাহলে দিনে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল তেলের সরবরাহ থেমে যেতে পারে।
এর প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারেও। ইন্ট্রাডেতে অপরিশোধিত তেলের দাম ওঠে ৭৫.২৩ ডলারে। অন্যদিকে ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম ৭.৬৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ব্যারেল প্রতি ৭৪.৬৫ ডলার। ২ এপ্রিল থেকে ধরলে এই প্রথম এত বড় লাফ দিয়েছে তেলের দাম। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডেট ক্রুড অয়েলের দাম ৭.৯১ শতাংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি হয়েছে ৭৩.৪২ ডলার। রেকর্ড উচ্চতায় চলে গিয়েছে এই তেলের দামও।
বাজার খুলতেই সেনসেক্স পড়ে ১২০০ পয়েন্টের বেশি। এর জেরে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের এই সূচক নেমে যায় ৮০ হাজার ৪২৭ পয়েন্টে। বৃহস্পতিবার বাজার বন্ধের সময় সেনসেক্স ছিল ৮১ হাজার ৬৯১ পয়েন্টে। বাজার খোলার সময়ে নিফটি৫০-র থাকে ২৪ হাজার ৪৭৩ পয়েন্টে। অর্থাৎ শেষ ক্লোজিংয়ের থেকে ৪১৫ পয়েন্ট নীচে নেমেছিল ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক। এর অন্যতম কারণ হলো মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতির অবনতি। ইজ়রায়েলি সেনা আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ইরানের রাজধানী তেহরানে। এর পর পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনেই। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যা শেয়ার বাজারের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।