কাশ্মীরে পহেলগাঁও হামলার এক মাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত। ইতিমধ্যেই অপারেশন সিঁদুরের কথা জেনে গিয়েছে গোটা বিশ্ব। সেই সাফল্যকে ঝোলাবন্দী করেই চলতি সপ্তাহেই কাশ্মীর যেতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শ্রীনগর-কাটরা রেলপথের উদ্বোধন করতে কাশ্মীর যাবেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি তাঁর হাত ধরে উদ্বোধন হওয়ার কথা আরও এক বন্দে ভারত এক্সপ্রেসেরও।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে ঘৃণ্য জঙ্গি হামলার পর প্রথমবার চলতি সপ্তাহেই ভূস্বর্গে বন্দে ভারত উদ্বোধন করতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। কাশ্মীরে সন্ত্রাসের চোখ রাঙানিকে মোক্ষম জবাব দিয়ে এবার ভূস্বর্গে উন্নয়নের কর্মসূচি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই সপ্তাহেই এই উদ্বোধন করতে পারেন বলে খবর। এই উদ্বোধন ৬ থেকে ৮ জুনের মধ্যে হতে পারে। ইতিমধ্যেই তাঁর এই সফরকে কেন্দ্র করে নানা আলাপ আলোচনা চলছে।
২২ এপ্রিল থেকে কাশ্মীর অনেক কিছু দেখেছে, সে রক্তাক্ত হয়েছে, দেখেছে থমথমে পরিবেশ, মৃত্যুর হাহাকার, সাইরেনের শব্দ, ড্রোন হামলা, এই সব কিছু ছেড়ে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে ভূস্বর্গ। আর সেখানেই পা রাখতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ আসলে সরাসরি সন্ত্রাসবাদকে করা চ্যালেঞ্জ। এক মাস আগে যে মাটি ভিজে গিয়েছিল রক্তের দাগে। সেই মাটিতে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের ছড়ি ঘোরাবেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য গত ১৯ এপ্রিলই এই রেলপথের উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তা বাতিল হয়। রেলের তরফে জানানো হয়, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। তার তিনদিন পরেই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে পহেলগাঁওয়ে।
এই রেলপথের উদ্বোধনের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত করার ৪২ বছরের প্রতীক্ষিত প্রকল্পটি অবশেষে সম্পূর্ণ হতে চলেছে। এর ফলে এবার থেকে সহজ হবে বৈষ্ণোদেবী ভ্রমণ কারণ
জম্মুর কাটরা, যা বৈষ্ণোদেবী তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, এখন সরাসরি শ্রীনগরের সঙ্গে যুক্ত হবে। এটি কেবল যাত্রী পরিবহনই নয়, পণ্য পরিবহনেও সহায়ক হবে, যার ফলে কাশ্মীরের আপেল, ড্রাই ফ্রুটস এবং হস্তশিল্পের মতো পণ্য দেশের অন্যান্য স্থানে সহজে পৌঁছাতে পারবে। সাধারণ বন্দে ভারত ট্রেনের তুলনায় এই বিশেষ সংস্করণটিতে ঠাণ্ডা হাওয়ার জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা রয়েছে। চালকের কেবিনে উষ্ণ উইন্ডশিল্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে কুয়াশা বা বরফ জমে দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত না হয়। এছাড়াও, ট্রেনের পাইপলাইন এবং বায়ো-টয়লেটে হিটিং এলিমেন্ট যুক্ত করা হয়েছে যাতে জল জমে না যায় এবং জরুরি পরিষেবাগুলি সচল থাকে।
তবে প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরের জন্য যতই উন্নয়নের বার্তা দিন না কেন, কাশ্মীর হামলা নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্ন কিন্তু আজও মিলিয়ে যায়নি। কারণ হামলার দিন কয়েক পর জানা যায় পর্যটকদের উপর যে হামলা হতে পারে তার আগাম খবর গোয়েন্দারা দিয়েছিল। তবে সেটা অন্য এলাকায়। সেই অঞ্চলে দীর্ঘ তল্লাশির পরও কোন কিছু না মেলায় ২২ এপ্রিল বন্ধ করা হয় তল্লাশি অভিযান। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওই একইদিনে পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের নিশানা করে জঙ্গিরা। খবর সত্ত্বেও কেন কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়নি, সেই নিয়ে মোদীকে তোপ দেগে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছিলেন, “কাশ্মীরে হামলা হতে পারে এমন গোয়েন্দা রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তার ভিত্তিতেই নিজের শ্রীনগর সফর বাতিল করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আগে থেকে তথ্য ছিল তা সত্ত্বেও কেন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হল না?’’ এবার দেখার কাশ্মীর থেকে ঠিক কি বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?