সোজা কাঠই ব্যবহার করা হয় এই রথগুলি তৈরি করতে। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শুর হয় রথ প্রস্তুতির কাজ। গাছ নির্বাচনের পর মন্দির কমিটির তরফ থেকে বনদফতরের কাছে নিতে হয় অনুমতি। এরপর যারা গাছ কাটেন, তাঁরাও বংশ পরম্পরায় গাছ কেটে আসছেন।
প্রবীর মুখার্জী, সাংবাদিক- সামনেই রথযাত্রা। অনেকেই হয়তো বা ভিড় জমাবেন পুরীতে। সেখানেই দেশের সবচেয়ে বড় রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। পুরীর জগন্নাথ দেব ও তাঁর লীলা নিয়ে অনেক গল্পই কথিত আছে। আজ আপনাদের জানাবো পুরীর জগন্নাথ দেবের রথ তৈরির একটি দিক নিয়ে। প্রথমেই বলে রাখি, আপনারা নিশ্চয় জানেন, পুরীর জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় আমরা তিনটি রথ দেখতে পাই। তিনটি রথ তিন ভাইবোনের জন্য। প্রতিটি রথের রয়েছে আলাদা করে নাম। প্রতিটি রথের আলাদা করে গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু, তিনটি রথই তৈরি করেন যাঁরা। তাঁরা কিন্তু, যে সে ছুতোর মিস্ত্রী নন। বংশ পরম্মপরায় তাঁরা এই কাজ করে আসছেন।
প্রতি বছর নতুন করে তৈরি করা হয় এই রথ। ফসি, ধৌসা, হাঁসি ও নিম গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয় এই রথ তৈরিতে। রথ তৈরিতে যেমন কোনও পেরেক ব্যবহার করা হয় না। তেমনই শুনলে অবাক হয়ে যাবেন, কোনও বাঁকা অথবা অপরিষ্কার কাঠ ব্যবহার করা হয় না। অর্থাৎ সোজা কাঠই ব্যবহার করা হয় এই রথগুলি তৈরি করতে। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শুর হয় রথ প্রস্তুতির কাজ। গাছ নির্বাচনের পর মন্দির কমিটির তরফ থেকে বনদফতরের কাছে নিতে হয় অনুমতি। এরপর যারা গাছ কাটেন, তাঁরাও বংশ পরম্পরায় গাছ কেটে আসছেন। সেই পরিবারের সদস্য সোনার কুড়ুল জগবন্ধুর পায়ে ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়ে তারপর জঙ্গলে যান গাছ কাটার কাজ শুরু করতে। মোট ৮৮৪টি গাছের ১২ ফুট উচ্চতার কাণ্ড ব্যবহার করা হয় এই তিনটি রথ তৈরি করতে। পাক্কায় ২ মাস ধরে কারিগররা নিরামীষ আহার গ্রহণ করে একাদশী তিথিতে উপবাসে থেকে তৈরি করেন জগবন্ধুর রথ। রথের চাকা তৈরিরও রয়েছে এক অবাক করা নিয়ম। কাঠগুলিতে গরম জলে সিদ্ধ করা হয় এরপর গোলাকার আকৃতির জন্য বাঁকানো হয়। এই ভাবেই জগন্নাথ দেবের নান্দীঘোষ, বলভদ্রের তালধ্বজ এবং দেবী সুভদ্রার দেবদলন রথের যথা ক্রমে ১৬টি, ১৪টি ও ১২টি রথের চাকা তৈরি করা হয়। কোনও ধাতব বস্তু ব্যবহার করা হয় না এই রথ তৈরিতে। অর্থাৎ লোহার কোনও যন্ত্র মানে করাৎ কিংবা হাতুড়ি কিছুই ব্যবহার করা হয় না এই রথ নির্মাণের কাজে। এই ভাবেই ক্রমেই প্রস্তুত হতে থাকে রথ। তিনটি রথেরই আলাদা নাম যেমন রয়েছে, তেমন তিনটি রথেই রক্ষক, দ্বারপাল, সারথী সবাই রয়েছেন আলাদা ভাবে। তাদের কথা পরের দিন আলোচনা করব।