বৃহস্পতিবার অভিশপ্ত বিমানটি ভেঙে পড়ার আগে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলকে বিপদাবার্তা অর্থাৎ মে ডে কল পাঠিয়েছিলন পাইলট।পাইলটের কাছ থেকে বিপদবার্তা পেয়ে এটিসি যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু আর যোগাযোগ করা যায়নি। তার পরই বিমান ভেঙে পড়ার খবর জানা যায়। পাইলটের মুখে এই মে ডে কেন? কি লুকিয়ে আছে এই শব্দের আড়ালে?
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ সাধারণত মাঝ আকাশে কোন বিমান যখন বড় বিপদের সম্মুখীন হয় তখন পাইলট এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলকে এই মে ডে কল বা বিপদ বার্তা পাঠান। এই মে ডে একটি আন্তর্জাতিক জরুরি সংকেত যা বেতার বার্তার মাধ্যমে জানানো হয়, যখন বিমানে বিরাট কোনও বিপদ ঘটে। তখন মূলত এই সংকেত পাঠানো হয়। অভিশপ্ত বিমানটির ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছিল কিন্তু সেই মে ডে কলের প্রত্যুত্তরে কোন পদক্ষেপেরই সময় পাওয়া গেল না।
মে ডে- আসলে একটা ফরাসি একটা শব্দবন্ধ। maider-এর মানে হল, আমাকে সাহায্য করো। এই মে ডে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ১৯২০ সালে। বর্তমানে একে একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল বলে ধরা হয়। সাধারণত তিনবার এই কল করা হয়। মে ডে, মে ডে, মে ডে। মূলত যাতে ভালোভাবে এটিসি বুঝতে পারে সেকারণেই এই মে ডে কল করা হয়। অন্তত তিনবার এই ধরনের কল করা হয়। বৃহস্পতিবারও এর অন্যথা হয়নি। দুপুর ১টা বেজে ৩৯ মিনিটে রানওযে ২৩ থেকে উড়েছিল ফ্লাইটটি। ওড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটিসিকে মে ডে কল করেছিলেন পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল বলে জানিয়েছে ডিজিসিএ। ভেঙে পড়ার আগে বিমানটি মাটি থেকে ৬২৫ ফুট উচ্চতায় ছিল। সেটি দ্রুতগতিতে নীচের দিকে নেমে আসতে শুরু করে। তার পরই সেটি মেঘানিনগরের কাছে বসতি এলাকায় ভেঙে পড়ে।
সাধারণত অত্যন্ত জরুরি অবস্থায় এই মে ডে কল করা হয়। জরুরি অবস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে, ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যাওয়া, আগুন লাগা, জাহাজ বা বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারানো, কোনও যান্ত্রিক ব্যর্থতা, চিকিৎসাগত জরুরি অবস্থা, বিমানের নিরাপত্তা বিপন্ন হয় এমন যে কোনও অবস্থা। অভিশপ্ত ফ্লাইট এআই-১৭১-এর ক্ষেত্রে বিমানটি ওড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মে-ডে কল করেছিলেন ক্যাপ্টেন। তাই মনে করা হচ্ছে, টেকঅফের পরেই কোনও গুরুতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল বিমানটি।
সাধারণত মে ডে কল পাওয়ার পর, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল বিপর্যস্ত ফ্লাইট বা জাহাজটির সঙ্গে একচেটিয়া ভাবে যোগাযোগ স্থাপন করে পাইলট বা ক্যাপ্টেনের থেকে জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য যেমন কী ধরনের জরুরি অবস্থা, বিমান বা জাহাজের অবস্থান, বিমান হলে তা কোন উচ্চতায় আছে, বিমান বা জাহাজে কতজন লোক আছেন ইত্যাদি জানতে চান। এর পরে জরুরি প্রতিক্রিয়া প্রোটোকল সক্রিয় করা হয়। উদ্ধারকারী দল, অগ্নিনির্বাপক পরিষেবা এবং চিকিৎসা কর্মীদের নিয়ে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। অভিশপ্ত ফ্লাইটটির ক্ষেত্রেও সেটাই করা হত যদি সে আরও একটু সময় দিত। কিন্তু এটিসির কাছে মে ডে কল যাওয়ার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভয়াবহ ভাবে ভেঙে পড়ে বিমানটি।