সোমবার ইস্তানবুলে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি নিয়ে দ্বিতীয় দফায় আলোচনা করার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন তুরস্কে পৌঁছেছেন সেই সময়ই তাঁর দেশে ভয়াবহ হামলা ইউক্রেনের। বেছে বেছে সামরিক বিমানগুলি লক্ষ্য করে নিখুঁত হামলা চালানো হয়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ৪০টিরও বেশি রুশ সামরিক বিমান। যা দেখে অনেকেই বলছেন একেবারে ভারতের ধাঁচেই এই আক্রমণ।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিক: গত ৩ বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে এটাই সবচেয়ে বড় হামলা। একসঙ্গে রাশিয়ার চারটি বায়ুসেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনের সিকিয়োরিটি সার্ভিস। যে হামলায়ভগত কয়েকদিন ধরে যে বোমারু বিমানগুলি ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে সেগুলিও ধ্বংস হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
ইউক্রেনের এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘স্পাইডার ওয়েব’, অর্থাৎ ‘মাকড়সার জাল’, প্রায় দেড় বছর আগে এই অভিযানে অনুমোদন দিয়েছিলেন জেলেনস্কি। তার পর থেকে চলেছে লাগাতার প্রস্তুতি। মোট ১১৭টি ড্রোন ব্যবহার করে ওলেনিয়া, বেলায়া এবং মস্কোর পূর্বে অবস্থিত ইভানোভো ও দিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটির ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বিমানগুলিতে আঘাত হানে ইউক্রেন। ক্ষতিগ্রস্ত যুদ্ধবিমানগুলির মধ্যে পরমাণু হামলা চালাতে সক্ষম TU-95 ও Tu-22 স্ট্রাটেজিক বম্বার বিমানও রয়েছে।
এই অভিযানটি নাকি জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউয়ের প্রধান ভ্যাসিল মালিউক দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। ইউক্রেনীয় ড্রোন বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসরের অনেকটাই বাইরে ছিল ওই গোটা এলাকা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই, বিমান ঘাঁটির কাছে গিয়ে হামলা না চালানো হলে এই ক্ষয়ক্ষতি করা সম্ভব হতো না। রাশিয়ার এক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ড্রোন হামলার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে এমন একটি ট্রাকের চালককে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কারণ আগে থেকেই নাকি ট্রাকে করে রাশিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিস্ফোরকবোঝাই ড্রোনগুলি। যাতে কারও নজরে না পড়ে, সে জন্য ড্রোনগুলিকে বোঝাই করে রাখা হয়েছিল সারি সারি কাঠের বাক্সে। প্রতিটি বাক্সে কাঠের ঢাকনার বদলে ছিল ধাতব প্লেট। পরিকল্পনামাফিক ট্রাকগুলিকে রাশিয়ার চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটির কাছাকাছি নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পর সময়মতো রিমোটের সাহায্যে দূর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ধাতব প্লেটের আবরণ। কাজ শুরু করে দেয় ১১৭টি কোয়াড্রোকপ্টার ড্রোন।